ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে বিদেশি বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশু। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট জীবিত জন্মের ৪০.৪ শতাংশই হয়েছে এমন পরিবারে, যাদের অন্তত একজন পিতা বা মাতা যুক্তরাজ্যের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছেন। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৩৫.১ শতাংশ।
সরকারি তথ্য বলছে, ব্রিটেনের ১৭ শতাংশ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এলাকাগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে অভিবাসী বাবা-মায়ের ঘরে, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে পাঁচটি এলাকায় ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নবজাতকের জন্ম হয়েছে বিদেশি বংশোদ্ভূত পিতামাতার ঘরে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাইগ্রেশন অবজারভেটরি’ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির গবেষক নুনি জর্গেনসেন জানিয়েছেন, এই প্রবণতার অন্যতম কারণ হলো যুক্তরাজ্যে অভিবাসী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। তার ভাষায়, “বেশিরভাগ অভিবাসী তরুণ বয়সে আসেন এবং এই বয়সেই সাধারণত পরিবার শুরু করার প্রবণতা বেশি থাকে। ফলে তাদের সন্তান জন্মদানের হারও তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।”
ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়টিতে সরকারের অভিবাসন নীতিতে শিথিলতা আনার ফলে দেশটিতে নেট অভিবাসনের হার রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যে ৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, লন্ডন ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে এই হার সবচেয়ে বেশি। যেমন:
-
লন্ডন সিটি: ৮৪.৪%
-
ব্রেন্ট: ৮৩.৯%
-
নিউহ্যাম: ৮২.৪%
-
হ্যারো: ৮২.২%
-
ইলিং: ৮১.৪%
-
ওয়েস্টমিনস্টার: ৮০%
লন্ডনের মধ্যে মাত্র দুটি বরো — বেক্সলি (৪৮.৬%) এবং ব্রোমলি (৪৪.৬%) — যেখানে বেশিরভাগ শিশুর জন্ম হয়েছে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যাটি ছিল পাঁচটি বরো।
বিদেশি বংশোদ্ভূত মায়েদের মধ্যে ভারতীয় নারীদের মাধ্যমে সর্বাধিক ৪.৪ শতাংশ জন্ম রেকর্ড হয়েছে, যা এক দশক আগের তুলনায় দ্বিগুণ। এর পরেই রয়েছে পাকিস্তানি (৩.৬%), নাইজেরিয়ান (২.৫%) এবং রোমানিয়ান (২%) নারীরা।
যুক্তরাজ্যের বার্ষিক জনসংখ্যা জরিপ অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশই বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। ওএনএস-এর (Office for জাতীয় Statistics) সর্বশেষ তথ্য বলছে, মোট ৩৩ শতাংশ নবজাতকের মা ছিলেন বিদেশে জন্মগ্রহণকারী।
নুনি জর্গেনসেন বলেন, “২০-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি, আর এ বয়সেই সাধারণত সন্তান জন্মদানের হার সবচেয়ে বেশি হয়। এছাড়া অভিবাসী নারীরা গড়ে একটু বেশি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন, যদিও এই ব্যবধান তুলনামূলকভাবে ছোট।”
অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, আগামী ৪০ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে পারেন। ২০৫০ সালের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের জনসংখ্যা ৭৩ শতাংশ থেকে কমে ৫৭ শতাংশে নামবে বলে পূর্বাভাস, এবং ২০৬৩ সালের মধ্যে তারা আর সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে না।
বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট গুডউইনের গবেষণা বলছে, শতাব্দীর শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার মধ্যে যারা শ্বেতাঙ্গ এবং কোনো অভিবাসী পিতামাতা ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের অনুপাত ৩৩.৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
তিনি মন্তব্য করেন, “এই পরিসংখ্যানগুলো প্রমাণ করে যে, যুক্তরাজ্যে অভিবাসন একটি গভীর জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের দিকেই এগোচ্ছে — এমন একটি বাস্তবতা, যেটি নিয়ে সাধারণ নাগরিকরা কখনও ভোট দেননি। এটা আমাদের জাতিগত পরিচয়, সংস্কৃতি ও সমাজ কাঠামো সম্পর্কে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করছে।”