সিলেটের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (NEUB) এক বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন করলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২।
“নতুন সূর্য, নতুন গান, একসাথে গড়ি বাংলার প্রাণ”—এই প্রাণবন্ত স্লোগানকে ধারণ করে ১৭ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছিলো এক উৎসবমুখর সাংস্কৃতিক মঞ্চ।
দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলা এই আয়োজনে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সিলেট শহরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
“সুরে ছন্দে নববর্ষ” শিরোনামের এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে NEUB Cultural Club। পুরনো বছরের ক্লান্তি ভুলে নতুন আশায় উজ্জীবিত হবার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছিল এই উৎসব।
উৎসবের দিন সকালে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে শুরু হয় সাজসজ্জার প্রস্তুতি। লাল-সাদা কাপড়ের বর্ণিল ঝালর, আলপনা, পটচিত্র, আর বাঙালিয়ানায় ভরা এক টুকরো মেলার আবহ সৃষ্টি করে পুরো পরিবেশ।
ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই এসেছিলেন পাঞ্জাবি, শাড়ি, ফতুয়া বা লাল-সাদা পোশাকে, যা নববর্ষের ঐতিহ্যকে আরও জাগরুক করে তোলে। অনেকে হাতে বানানো মুখোশ, বাঁশের ব্যানার, আর বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ধারণ করে এমন নানা শিল্পকর্ম নিয়ে অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল NEUB Cultural Club-এর পরিবেশিত সংগীত ও নৃত্য। শুরুতেই ছিল রাগাশ্রিত সূচনা সংগীত, যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় নতুন বছরের শুভ আগমন। এরপর একে একে মঞ্চে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা।
লোকগান থেকে শুরু করে রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক বাংলা গান থেকে শুরু করে দলীয় নৃত্য—সব মিলিয়ে দর্শকদের চোখ ও মন ভরে গিয়েছিলো শিল্প-সাহিত্য আর সংস্কৃতির আবেশে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবেশন করেন “এসো হে বৈশাখ”—যা শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
এই ধরনের অনুষ্ঠানে শুধু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণই নয়, শিক্ষকরাও ছিলেন সমানভাবে যুক্ত।
এক শিক্ষক বক্তব্যে বলেন, “নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি সবসময়ই চায় শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের চর্চা হোক। এই আয়োজন আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত রাখবে।”
অনুষ্ঠানস্থলে ছিল বাংলা খাবারের আয়োজন। পান্তা-ইলিশ, খিচুড়ি, পায়েস, আর নানা রকম ভর্তা ও আচার পরিবেশিত হয় অংশগ্রহণকারীদের জন্য।
সন্ধ্যাবেলায় ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল আনন্দমুখর পরিবেশ, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন, ছবি তোলেন, আর নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “এমন আয়োজনে আমরা সবাই এক পরিবারের মতো হয়ে যাই। শুধু পড়াশোনা নয়, সংস্কৃতি আমাদের মনকে উজ্জীবিত রাখে।”
বাংলা নববর্ষ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের এই আয়োজন তা-ই আবারও প্রমাণ করলো। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহ, সৃষ্টিশীলতা আর দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
নতুন বছরের সূর্য উঠেছে সুরে আর ছন্দে, সেই আলোয় ভরে উঠুক প্রতিটি হৃদয়।