ইংল্যান্ডের জলাধারগুলো বর্তমানে গত দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। জুন মাসে জলাধারগুলো গড়ে ৭৬% পূর্ণ ছিল, যা ২০২২ সালের খরার তুলনাতেও কম। গ্রীষ্মের উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ঘাটতির ফলে পানির স্তর দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—জল সংস্থাগুলোর এখনই হোসপাইপ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা উচিত। রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইড্রোলজির অধ্যাপক ডঃ জেস নিউম্যান বলেন, “হোসপাইপ নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করলে দৈনন্দিন পানির ব্যবহার ৩%-৭% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এটি জনগণের মধ্যে পানির সংকট সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেও সহায়ক।”
ডঃ জোনাথন পল, রয়্যাল হলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী, বলেন, “জলাধার স্তর সরাসরি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল, তাই স্থানীয়ভাবে জল ব্যবহারে বিধিনিষেধ প্রয়োগ প্রয়োজন।”
এই সপ্তাহে ইয়র্কশায়ার ওয়াটার এবং সাউথ ইস্ট ওয়াটার যথাক্রমে ইয়র্কশায়ার, কেন্ট ও সাসেক্সে হোসপাইপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদিও বেশ কিছু এলাকায় এখনও নিষেধাজ্ঞা নেই, তবুও কৃষকদের জন্য কঠোর সেচ সীমাবদ্ধতা জারি করা হয়েছে, যা খাদ্য উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জাতীয় কৃষক ইউনিয়নের সভাপতি টম ব্র্যাডশ বলেন, “পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই জল উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, যা বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে।”
সরকারের জাতীয় খরা গোষ্ঠীর সূত্র জানিয়েছে, পানি কোম্পানিগুলো হোসপাইপ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগে অনাগ্রহী, কারণ এটি তাদের গ্রাহক সন্তুষ্টি রেটিংকে প্রভাবিত করতে পারে। পরিবেশ সংস্থা মনে করে, নদী থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের অনুমতির আগে হোসপাইপ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা উচিত এবং তা দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে হবে।
দক্ষিণ-পূর্বে কিছু অঞ্চল ভূগর্ভস্থ জলের উৎসে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় থাকলেও বেশিরভাগ এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের স্তরও স্বাভাবিকের নিচে নেমে গেছে। জুলাই মাসে এ অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউকে সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজি।
সেভার্ন ট্রেন্ট এবং ইউনাইটেড ইউটিলিটিস-এর মতো জল কোম্পানিগুলোর জলাধার স্তরে ব্যাপক হ্রাস দেখা গেছে—যেখানে ইউনাইটেড ইউটিলিটিস-এর স্তর ৮৪.৫% থেকে নেমে এসেছে ৬৫%-এ।
১৯৯২ সালের পর থেকে ইংল্যান্ডে কোনো বড় জলাধার নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। ২০২৪ সালে সরকার ও পানি সংস্থাগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে নয়টি নতুন জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
ওয়াটার ইউকে এক বিবৃতিতে জানায়: “পানি সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যেন গ্রাহকদের ওপর বিধিনিষেধ না আসে। তবে সরকার নির্ধারিত স্তরে পৌঁছালে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ প্রয়োজন হয়ে পড়ে।”
পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অবকাঠামোর দুর্বলতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যে বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ কারণে সরকার ১০৪ বিলিয়ন পাউন্ড বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে, যার মাধ্যমে নতুন জলাধার ও পাইপ নির্মাণসহ পানি অপচয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”