যুক্তরাজ্যে কর্মরত বিদেশি সেবা কর্মীদের শোষণ ও ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার মুখে সাহায্য করতে সরকার **আন্তর্জাতিক নিয়োগ তহবিল পুনরায় চালু করেছে**। যেসব কর্মী অনৈতিক নিয়োগকর্তার কারণে চাকরি হারিয়েছেন বা ভিসা বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য এই তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
তবে, আগের তুলনায় এবার তহবিলের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যেখানে বরাদ্দ ছিল ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড, সেখানে এবছর তা কমিয়ে ১২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড করা হয়েছে। এই অর্থ ইংল্যান্ডজুড়ে ১৫টি আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে স্থানীয় কাউন্সিল ও সেবা প্রদানকারী সংগঠনগুলো যুক্ত।
ধারাবাহিকভাবে শোনা যাচ্ছে, অনেক বিদেশি কর্মীকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে, এমনকি অনুপযুক্ত বাসস্থানে রেখেও বেতন ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না। অনেককে আবার কোনও কাজই দেওয়া হয়নি, শুধু ভিসা দিয়ে এনে ফেলে রাখা হয়েছে।
হোম অফিসের সংস্থা UK ভিসা অ্যান্ড ইমিগ্রেশন (UKVI) জানিয়েছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত **৪৭০টিরও বেশি স্পনসর লাইসেন্স বাতিল** করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বহু কর্মী, যাদের ৬০ দিনের মধ্যে নতুন স্পনসর খুঁজে না পেলে দেশে ফিরে যেতে হয়।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সময়কালে ৮,৮০০ জন বিদেশি কর্মী আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। তবে এর মধ্যে মাত্র ৫৫০ জনকে নতুন চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া গেছে, সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন কেয়ার মন্ত্রী স্টিফেন কিনক।
তিনি আরও বলেন, যাদের সহায়তা করা হয়েছে, তাদের সবাই সরাসরি স্পনসর লাইসেন্স বাতিলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নাও হতে পারে। তবুও, সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
সরকার নতুন নীতিমালার আওতায় বলেছে, বিদেশ থেকে নতুন কর্মী আনার আগে দেশেই চাকরিহীন বা বাস্তুচ্যুত কর্মীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই নীতি বাস্তবায়নে পুনরায় বরাদ্দকৃত তহবিল কাজে লাগবে।
স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা বিভাগ (DHSC) জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তারা চায়:
– বাস্তুচ্যুত কর্মীদের বড় অংশকে নতুন চাকরি দিতে,
– সচেতনতা বাড়াতে এবং অসাধু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নজরদারি জোরদার করতে,
– এবং বৈধ নিয়োগদাতার তালিকা তৈরি ও তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করতে।
এই তহবিলের আওতায় কর্মীদের জন্য ই-মেইল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সিভি প্রস্তুতির সহায়তা, সাক্ষাৎকার প্রশিক্ষণ, এবং দায়িত্বশীল নিয়োগদাতাদের সঙ্গে পরিচয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বিদেশি সেবা কর্মীরা যুক্তরাজ্যের যত্ন ও স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, তাদের একটি বড় অংশ আজ শোষণের শিকার। এই বাস্তবতা মোকাবেলায় সরকারের এই উদ্যোগ স্বাগতযোগ্য হলেও, পর্যাপ্ত ও কার্যকর সহায়তা কতটা নিশ্চিত করা যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।