ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের চ্যারিটি কমিশন সম্প্রতি ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে একটি অফিশিয়াল সতর্কবার্তা জারি করেছে। গত ১০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত এই সতর্কবার্তায় ট্রাস্টের বিরুদ্ধে আস্থা ও দায়িত্ব লঙ্ঘন, অব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে।
কমিশনের বরাতে জানা যায়, একটি বিনিয়োগের মাধ্যমে চ্যারিটির প্রায় £১ মিলিয়ন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি টাকারও বেশি) অর্থের অপচয় হয়েছে, যা চ্যারিটির জন্য একটি বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়। কমিশনের তদন্ত অনুযায়ী, এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ আগাম যাচাই-বাছাই করা হয়নি। বিনিয়োগকারী, ব্যক্তিগত গ্যারান্টর এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সম্পর্কে কোনো রেকর্ড রাখা হয়নি, যা চ্যারিটির দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
চ্যারিটি কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, সেই সময়কার ট্রাস্টিরা যথাযথ যত্ন ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেননি। তারা চ্যারিটির তহবিল ব্যবহারে পর্যাপ্ত তদারকি করেননি এবং যে বিনিয়োগে এই বিপুল অর্থ খরচ হয়েছে, তার পেছনে ন্যূনতম যাচাই প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়নি।
এর ফলে ট্রাস্টের £১ মিলিয়ন অর্থ হারিয়ে গেছে এবং কমিশনের মতে, এই অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা “অত্যন্ত কম”।
এই অব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে চ্যারিটি কমিশন চারটি মূল নির্দেশনা দিয়েছে:
১. চ্যারিটির সকল তহবিল ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি নিশ্চিত করতে হবে, এবং যথাযথ আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. হারানো অর্থ উদ্ধারে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, যার মধ্যে প্রাক্তন কর্মীদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।
৩. চ্যারিটির সার্বিক পরিচালনা পদ্ধতি একটি স্বাধীন দলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করতে হবে, এবং সেই পর্যালোচনার রিপোর্ট চ্যারিটি কমিশনে দাখিল করতে হবে।
৪. উপরোক্ত সব কার্যক্রম সতর্কবার্তার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ, এটি পূর্ব লন্ডনের প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বহু মুসলিম কমিউনিটির আস্থার কেন্দ্রস্থল। শিক্ষা, সমাজসেবা এবং ধর্মীয় নানা কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত এই চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে জনমনে প্রশ্ন ও হতাশা তৈরি হয়েছে।
কমিশনের সতর্কবার্তার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ব্রিটেনজুড়ে মুসলিম চ্যারিটিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং পরিচালন ব্যবস্থার প্রতি নতুন করে নজর দিচ্ছে প্রশাসন ও সাধারণ জনগণ। কেউ কেউ এই ঘটনাকে চ্যারিটিগুলোর জন্য একটি সতর্ক সংকেত বলেও অভিহিত করেছেন।
চ্যারিটি ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে কমিউনিটির পক্ষ থেকে স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহিতার দাবি উঠে এসেছে।