রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আসা অনেক ইউক্রেনীয় নাগরিক, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ইউক্রেনের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল এখন “সাধারণত নিরাপদ”, তাই তাদের দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব।
আশ্রয় প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করছিলেন, সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে ও জীবন পুনর্গঠনের আশায়। অনেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে এসেছেন এবং তাদের কাছে আর ফিরে যাওয়ার কিছু নেই বলে জানান।
একজন ইউক্রেনীয় বলেন, তার জন্মস্থান এখন যুদ্ধক্ষেত্র হলেও তার আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে বলা হয়েছে তিনি ইউক্রেনের অন্য অংশে স্থানান্তরিত হতে পারেন।
আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা স্টার্লিং ল’ জানায়, তারা প্রতি সপ্তাহে বহু ইউক্রেনীয়র কাছ থেকে এমন অভিযোগ পান। অনেকের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, যার ফলে তাদের দীর্ঘ আপিল প্রক্রিয়ায় পড়তে হচ্ছে এবং অনিশ্চয়তার মুখে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
যদিও অস্থায়ী ভিসার আওতায় ইউক্রেনীয় নাগরিকরা ১৮ মাস যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি পান, তবে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাদের মানসিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত করছে।
স্টার্লিং ল’–এর অভিবাসন আইনজীবী হ্যালিনা সেমচাক বলেন, তিনি এমন একটি পরিবারের সঙ্গে কাজ করছেন যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত নিকোপোল শহর থেকে এসেছেন। সেই পরিবারে রয়েছেন একক মা, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুরুষ এবং যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া একটি শিশু।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রত্যাখ্যানপত্রে বলা হয়েছে, আবেদনকারীরা ইউক্রেনের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলে স্থানান্তরিত হতে পারেন, যেখানে জনসেবা ও সহায়তা পাওয়া সম্ভব। তবে সেমচাক বলেন, “এই মূল্যায়ন ইউক্রেনের বাস্তবতার সঙ্গে একেবারেই অমিল।” তার মতে, যুদ্ধের ঝুঁকি এবং ব্যক্তিগত ক্ষতির আশঙ্কা উপেক্ষা করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে, যা মানবাধিকার কনভেনশনের ধারা ৩ ও ৮–এর পরিপন্থী।
ওলেকসান্ডার জবিটস্কি, যিনি দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা থেকে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে এসেছেন, তার আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আবেদন চলাকালীন সময়েই তার এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাঁচজন নিহত হন। তিনি বলেন, তার চার বছরের ছেলে এখন ইংরেজিতে সাবলীল এবং স্কুলে পড়ছে, আর স্ত্রী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, দেশে ফিরে গেলে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য ডাকা হতে পারে।
“প্রত্যাখ্যান একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল,” জবিটস্কি বলেন। “এই সিদ্ধান্ত আমাদের পুরো পরিবারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না। এটি এক নিদারুণ বাস্তবতা।”
শরণার্থী কাউন্সিলের সিনিয়র বিশ্লেষক কামা পেট্রুচেঙ্কো বলেন, ইউক্রেন সম্পর্কে বর্তমান সরকারি নির্দেশনা যথেষ্ট নমনীয় নয় এবং এটি স্থানীয় নিরাপত্তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩ সাল থেকে ৭২৪ জন মানবিক সুরক্ষা ও ৪৭ জনকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একজন মুখপাত্র জানান, “আমরা ইউক্রেন থেকে ৩ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছি এবং তাদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ভিত্তিতে সকল আবেদন যাচাই করে থাকি।”
উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনটি ২৭ জুন ২০২৫ তারিখে সংশোধিত হয়েছে, কারণ পূর্ববর্তী সংস্করণে হ্যালিনা সেমচাককে সলিসিটর বলা হলেও তিনি আসলে ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইস অথরিটিতে নিবন্ধিত একজন অভিবাসন আইনজীবী।