যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে শিশু ও অভিবাসীদের পাচার করছিল একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্র। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) জানায়, এই গ্যাংটি মাত্র পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের পর্যন্ত রেফ্রিজারেটেড লরির ভেতরে লুকিয়ে পাচার করত। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তারা অন্তত ২০ বার পাচার অভিযান চালিয়েছে।
চক্রের মূল হোতা ছিলেন ৪১ বছর বয়সী আলজেরিয়ান নাগরিক আজিজ বেনানিবা। তার নেতৃত্বে ফ্রেঞ্চভাষী উত্তর আফ্রিকান অভিবাসীদের পর্যটক ভিসায় যুক্তরাজ্যে আনা হতো। পরে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে £১,২০০ আদায় করে ডোভার হয়ে ট্রাকের মাধ্যমে ফ্রান্সে পাচার করা হতো।
এক পাচারকারীর ফোনে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অভিবাসীরা লরির ভেতরে গাদাগাদি করে আটকে পড়ে আতঙ্কে চিৎকার করছে। এনসিএ জানায়, অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে অমানবিকভাবে রেফ্রিজারেটেড ট্রেইলারে করে পাচার করা হতো।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে ফ্রান্সের কালে বন্দরে এক লরিতে ৫৮ জন অভিবাসী উদ্ধার করলে তদন্ত শুরু হয়। পরবর্তীতে স্যান্ডউইচ, কেন্টে এক বন্ধ রেফ্রিজারেটেড লরি থেকে এনসিএ আরও ৩৯ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে।
২০২৪ সালের মার্চে উত্তর লন্ডনে অভিযানে আজিজ বেনানিবাসহ গ্যাংয়ের শীর্ষ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৫ সালের ১৭ জুলাই আইলওয়ার্থ ক্রাউন কোর্টে বেনানিবাকে ১২ বছর ১১ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অন্য দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন:
-
মোহাম্মদ বেচকিত – ১০ বছর ৪ মাস
-
মাহমুদ হাইদুস – ১৩ বছর ৬ মাস
-
আবেদ কারুজ – ৮ বছর ১০ মাস
-
আমোর ঘাব্বারি – ৯ বছর
-
মোহাম্মদ আবদেলহাদি – ৭ বছর ৩ মাস
-
মোহাম্মদ বৌরিশ – ৭ বছর ৬ মাস
এনসিএ’র প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা জন টার্নার বলেন, “এই চক্রের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল অর্থ উপার্জন। মানুষের জীবনের কোনো মূল্য তাদের কাছে ছিল না।” তিনি আরও জানান, এ তদন্তের মাধ্যমে শত শত মানুষ বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের বিশেষ প্রসিকিউটর জেনিন বাফ বলেন, “এটি অত্যন্ত পরিকল্পিত একটি অপরাধ। এই গ্যাংটি বহুবার চেষ্টা করে শত শত মানুষকে অমানবিক অবস্থায় পাচার করেছে, কেবল মুনাফার জন্য।”
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস