সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্টের তৃতীয় দিনে দেখা গেল এক নতুন মোড়। আগের দিন যে ম্যাচে টাইগাররা ২৫ রানে পিছিয়ে ছিলো, সেই ম্যাচেই আজ নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও দিনের শুরুটা ছিলো অনিশ্চয়তায় ঘেরা — কারণ সকাল থেকেই সিলেটে বিরাজ করছিলো ঘন মেঘ, যা শেষে গিয়ে এক দফা বৃষ্টিতে রূপ নেয়। এতে দিনের প্রথম সেশন পুরোপুরি ভেস্তে যায়।
দিনের শুরুতে খেলোয়াড়দের মুখে প্রত্যাশার ছাপ ছিলো স্পষ্ট। কারণ এই সেশনটাই ছিলো ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে এমন মুহূর্ত। কিন্তু প্রকৃতির বাঁধায় সময় হাতছাড়া হলো। একটানা বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয় দুপুর একটার পর। ম্যাচের সময় কমে এলে কৌশলগত দিক দিয়েও উভয় দলকে নতুন করে ভাবতে হয়।
খেলা শুরু হতেই টাইগার শিবিরে দেখা যায় প্রথম ধাক্কা। দলীয় সংগ্রহ মাত্র ৪ রানে বাড়তেই, জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাব্বানি তুলে নেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে। উইকেটের পিছনে সহজ এক ক্যাচে তাকে বিদায় দেন কিপার। ইনিংসের এই শুরুর ধাক্কা অবশ্য দলের আত্মবিশ্বাসে বড় ধস নামাতে পারেনি।
দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সাথে যোগ দেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক। দু’জনের ব্যাটে ধীরে ধীরে স্থিরতা ফেরে দলের ইনিংসে। মাঠে উপস্থিত দর্শকরাও কিছুটা স্বস্তি পান এ জুটির দৃঢ়তায়। প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে শান্তর চোখে-মুখে ছিলো আত্মবিশ্বাসের ছাপ। তার ব্যাটে ছিলো ধারাবাহিকতা ও সংযম। মুমিনুলও কম যান না। বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে দলের হাল ধরেছেন তিনি।
বৃষ্টির কারণে সময় সংকুচিত হওয়ায়, বাংলাদেশের কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। দল যে এখন লক্ষ্য স্থির করে সফরকারীদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায়, তা বেশ স্পষ্ট। পিচের গতি ও আচরণ মাথায় রেখেই ব্যাটাররা খেলার ছন্দ পাল্টে নিচ্ছেন, কখনো রক্ষণাত্মক, কখনো আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে।
যদিও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ প্রত্যাশার তুলনায় কম ছিলো, এবং তারা কিছুটা পিছিয়েই ছিলো, তবে এই ইনিংসে শক্ত জুটি গড়তে পারলে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ যথেষ্টই আছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং গভীরতা ও স্পিন আক্রমণ যে কোনো সময় ম্যাচে মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
গতকাল ধারণা করা হয়েছিলো, আজ শনিবার হওয়ায় মাঠে দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু বৃষ্টির ভয়ে কিংবা অন্যান্য কারণে প্রত্যাশার তুলনায় দর্শক উপস্থিতি আজ তেমন দেখা যায়নি। গ্যালারির অনেক আসনই খালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যদিও যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা টাইগারদের প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশায় চিৎকার করে গলা ফাটিয়েছেন।
সবমিলিয়ে সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন যেন এক নাটকীয় চিত্রনাট্যে মোড় নিলো। বৃষ্টি যেমন ছন্দপতন ঘটিয়েছে, তেমনি শান্ত-মুমিনুলের ব্যাটে যেন নতুন করে গল্প রচনার ইঙ্গিত। চতুর্থ দিন সকালে যদি এই জুটি কিছুটা সময় কাটিয়ে দিতে পারে এবং স্কোরবোর্ডে বড় লক্ষ্য দাঁড় করাতে পারে, তবে বাংলাদেশ ম্যাচে দৃঢ়ভাবে ফিরে আসবে—এমন আশাই এখন ভক্তদের মনে।