যুক্তরাজ্যে এখন দক্ষ কর্মী ভিসায় আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, এই তালিকায় কবি ও ব্লগারদের পেশাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ফলে তারাও সুরক্ষিত পেশা হিসেবে ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
লেবার সরকার ইতোমধ্যে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। চলতি বছর নেট অভিবাসন ১০ লাখের কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রেক্ষিতে সরকার ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, অভিবাসন নীতিকে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, সরকার আসল প্রয়োজনের চেয়ে কম প্রয়োজনীয় পেশাগুলিকে রক্ষা করছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—এই ব্যবস্থায় অর্থনীতিতে অবদান রাখা প্রকৃত কর্মীদের পরিবর্তে এমন কিছু পেশাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যেগুলোর প্রভাব সীমিত।
মে মাসে ঘোষিত “ক্র্যাকডাউন” বা দমন নীতির আওতায় স্বল্প সময়ের জন্য একটি অস্থায়ী পেশার তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে উল্লেখ ছিল কোন কোন পেশা দক্ষ কর্মী ভিসার আওতায় আসবে। এই তালিকায় রয়েছে “সমতা ও বৈচিত্র্য ব্যবস্থাপক” নামক পেশাও, যা সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
এ ধরনের পদগুলো মূলত সরকারি চাকরিতে প্রচুর ব্যয়ে পরিচালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, শুধু সিভিল সার্ভিসেই বছরে ২৭ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হয় ডাইভারসিটি অফিসারদের পেছনে। এনএইচএস ট্রাস্টগুলোও প্রতি বছর ১৩ মিলিয়নের বেশি ব্যয় করছে এ খাতে।
এই পদের আওতায় “মানবসম্পদ ও শিল্প সম্পর্ক কর্মকর্তা” নামে একটি ভিসা কোড প্রযোজ্য হয়। এপ্রিল মাসে সরকারের ওয়েবসাইটে এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত পেশাগুলোর বিস্তারিত সংজ্ঞাও প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে এইচআর উপদেষ্টা, নিয়োগ পরামর্শদাতা এবং সমতা ও বৈচিত্র্য কর্মকর্তা।
রিফর্ম ইউকে দলের এমপি লি অ্যান্ডারসন এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, “কর্মভিত্তিক অভিবাসনের মান এতটা নিচে কখনো নামেনি। আমরা চিকিৎসক, নির্মাতা বা উদ্যোক্তা চাই, যারা সরাসরি জনসেবা ও অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন – কবি বা ব্লগার নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই নীতিগুলো করদাতাদের অর্থের অপচয় ঘটায় এবং আবাসন সংকটকে আরও তীব্র করে।”
ইভেট কুপার দক্ষ কর্মী ভিসার পেশার সংখ্যা কমিয়ে এনে অভিবাসন হ্রাসের একটি রূপরেখা তৈরি করেছেন। এর আওতায় ২২ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নিয়ম অনুযায়ী কিছু কম দক্ষ পেশা ভিসার আওতা হারাবে, আবার কিছু অস্থায়ী ঘাটতির তালিকায় থেকে সুরক্ষা পাবে।
এই তালিকায় কবি ও ব্লগারদের পেশাও অন্তর্ভুক্ত, যা লেখক ও অনুবাদকদের বিস্তৃত গোষ্ঠীকে কভার করে। তবে ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, স্বনির্ভর লেখকদের বার্ষিক গড় আয় মাত্র £৭,০০০—যা করযোগ্য ব্যক্তিগত ভাতা (£১২,৫৭০)-এরও নিচে।
এই অস্থায়ী ঘাটতির তালিকা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর অভিবাসন উপদেষ্টা কমিটি তা পর্যালোচনা করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে কোন পেশাগুলো দক্ষ কর্মী ভিসার যোগ্য থাকবে।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “এই সীমিত সময়ের অস্থায়ী তালিকা শুধুমাত্র অতীব প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়োগে সহায়তা করবে। তালিকায় থাকা প্রতিটি খাতে প্রশিক্ষণ কৌশল থাকতে হবে, না হলে তারা ভবিষ্যতে অভিবাসন সুবিধা হারাবে।”
বর্তমানে তালিকায় থাকা পদের মধ্যে রয়েছে এইচআর ম্যানেজার, পরিচালক এবং সমতা, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি ব্যবস্থাপক, যাদের অবস্থান ভবিষ্যতে পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে।