যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর ছাড়াও আন্তর্জাতিক অভিবাসন এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (ওএনএস) ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০৩২ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে, যেখানে এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
ওএনএস-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে ২০৩২ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ২০.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, এই এলাকায় ৩ লাখ ২৩ হাজার ৮৫৪ জন বসবাস করলেও তা ২০৩২ সালে প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এদের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।
এছাড়াও, ইসলিংটনে জনসংখ্যা ১৩.১ শতাংশ এবং ক্যামডেনে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, উভয় এলাকায়ই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের অংশ ছিল প্রায় ২.৮ শতাংশ।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে তুলনামূলকভাবে উচ্চ জন্মহার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে সাত হাজার সাতটির মাতা ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, যা বিদেশি মায়েদের তালিকায় বাংলাদেশকে ষষ্ঠ স্থানে রেখেছে।
২০০১ সালের আদমশুমারিতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৮৩ হাজার, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৪৪ হাজারে — দ্বিগুণেরও বেশি।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে অনেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যে এসেছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার ইতালি থেকে।
ব্রেক্সিটের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যে সহজে প্রবেশ এবং পরে ইইউ সেটেলমেন্ট স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ এই অভিবাসনকে ত্বরান্বিত করেছে। ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত এই স্কিমে ৮৪ লাখ আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় নাগরিকও রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
ওএনএস জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ জায়গায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান উৎস হলেও, লন্ডনের মতো শহরে আন্তর্জাতিক অভিবাসনই মূল চালিকাশক্তি। এর ফলে তরুণদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে।
এই প্রবণতার ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সম্প্রসারণ ঘটছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীর অভাবে ইসলিংটন, ল্যাম্বেথ এবং হ্যাকনির মতো এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেলেও প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি পরিবারের মধ্যে বসতি স্থাপনের হার বাড়ছে।