যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, ২০২৫ সালের ২২ জুলাই থেকে কেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য বিদেশি কর্মী নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, যারা যুক্তরাজ্যে বৃদ্ধ বা অসুস্থ মানুষদের দেখাশোনার কাজে আসতে চাইতেন, তাদের জন্য এই পথ আর খোলা থাকছে না।
সরকার জানিয়েছে, এখন থেকে যুক্তরাজ্যে কাজ করতে হলে বিদেশি নাগরিকদের অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। পাশাপাশি, তাদের বেতনও হতে হবে সরকারের নির্ধারিত উচ্চ পরিমাণে—যা আগের তুলনায় অনেক বেশি।
অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার পার্লামেন্টে এই নতুন নীতির ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমরা পুরো অভিবাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠন করছি। আগের সরকারের সময়ে মাত্র চার বছরে অভিবাসনের সংখ্যা চারগুণ বেড়ে গিয়েছিল। এখন সময় এসেছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনার।”
সরকার বলছে, বহু কোম্পানি বিদেশ থেকে সস্তা শ্রমিক এনে কম বেতনে কাজ করাচ্ছিল, যার ফলে দেশের স্থানীয় শ্রমিকরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছিল, বিদেশি কর্মীদের অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, চুক্তিভঙ্গের শিকার হচ্ছেন কিংবা অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শর্টেজ লিস্ট থেকেও বাদ ১০০টির বেশি পেশা
সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগের ‘শর্টেজ অকুপেশন লিস্ট’ থেকে ১০০টিরও বেশি পেশাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন—রান্নার কাজ, ওয়াল প্লাস্টারিংসহ অন্যান্য হস্তশ্রমভিত্তিক কাজের জন্য আর কোনো ছাড় বা বিশেষ ভিসা সুবিধা থাকবে না।
শুধুমাত্র কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেশা এই তালিকায় সীমিত সময়ের জন্য রাখা হবে, তবে সেগুলোর ক্ষেত্রেও থাকবে কঠোর শর্ত। যেমন—এখন থেকে বিদেশি কর্মীরা পরিবারের সদস্যদের (স্বামী-স্ত্রী বা সন্তান) সঙ্গে আনতে পারবেন না, আগের মতো কোনো ফি ছাড় বা নিম্ন বেতনের সুবিধাও পাবেন না।
বর্তমান কর্মীদের জন্য সীমিত ছাড়
যারা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে কেয়ার ও স্কিলড ওয়ার্ক ভিসায় কাজ করছেন, তারা চাইলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ভিসা পরিবর্তন করে যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পাবেন। তবে নতুন করে আর কেউ কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ইমিগ্রেশন ও দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে সরকারের কড়াকড়ি
যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন মন্ত্রী সীমা মালহোত্রা জানিয়েছেন, “নতুন যেসব বেতন ও শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত যুক্ত করা হচ্ছে, তা দেশের বর্তমান শ্রমবাজার ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাধীন ‘মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি’ দিয়ে পুরো ভিসা সিস্টেমের একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করানো হবে।”
সরকার আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ইমিগ্রেশন স্কিলস চার্জ (বিদেশি কর্মী নিয়োগে ফি) বাড়ানো হবে, যেন কোম্পানিগুলো সহজে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভর করতে না পারে। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রেও শর্ত কঠোর করা হবে, যাতে কেবল যোগ্য ব্যক্তিরাই আবেদন করতে পারেন।
লক্ষ্য: দেশীয় জনশক্তি তৈরি ও সুরক্ষা
সরকারের মতে, এসব পরিবর্তনের লক্ষ্য হলো—দেশীয় তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মীতে পরিণত করা এবং বিদেশি সস্তা শ্রমের উপর নির্ভরতা কমানো। এতে দেশের ভেতরেই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরবে।