১৪ মে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করার পর অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন যে ডলারের দাম বেড়ে যাবে। তবে বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো—রেমিট্যান্স ডলারের দর কমতে শুরু করেছে।
এর পেছনে মূলত কয়েকটি কারণ কাজ করছে: রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, আমদানি চাপ হ্রাস, এবং ব্যাংকিং খাতে ডলারের চাহিদা কমে আসা। ফলে রেমিট্যান্স ডলারের বাজারে দর পড়তে শুরু করেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছে ১২২.৭০–১২২.৮০ টাকায়, যা মে মাসের মাঝামাঝির তুলনায় ৫০–৭০ পয়সা কম। তখন দর ছিল ১২৩.২০–১২৩.৩০ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতির পরও, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলারের দাম ১২৩ টাকার বেশি না রাখার বিষয়টি একপ্রকার অঘোষিত সমঝোতায় পরিণত হয়। ফলে নীতির পরপরই বাজারে ডলারের দর কিছুটা পড়ে যায়।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ডলারের দর চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ডলারের চাহিদা আগের মতো নেই, তাই দামও কমছে।”
দেশে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ায় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি অনেক কমেছে। ব্যাংকগুলো আগের বকেয়া আমদানি বিলও ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে। অন্যদিকে রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে এবং রেমিট্যান্সও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী:
-
২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই–মে:
-
রপ্তানি আয়: ৪৪.৯৫ বিলিয়ন ডলার (১০.৩৬% প্রবৃদ্ধি)
-
রেমিট্যান্স: ২৯.৫ বিলিয়ন ডলার (২৬.৭% প্রবৃদ্ধি)
-
-
আমদানি এলসি (জুলাই–এপ্রিল):
-
খোলা হয়েছে: ৫৮.৯৪ বিলিয়ন ডলার (২.৯৮% প্রবৃদ্ধি)
-
নিষ্পত্তি হয়েছে: ৫৮.৮২ বিলিয়ন ডলার (৬.০৮% প্রবৃদ্ধি)
-
ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ না থাকলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরও বেশি হতো বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কিছুটা বাড়লেও সামগ্রিকভাবে ডলারের চাহিদা এখনও সীমিত। বিনিয়োগকারীরা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন, তাই নতুন আমদানির চাপও দেখা যাচ্ছে না।
একটি আন্তর্জাতিক মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের কান্ট্রি হেড জানান, আগে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের জন্য ফোন করত, এখন অনেক ব্যাংক তাদের ডলার না চাওয়ায় বিক্রির জন্য তারাই যোগাযোগ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ৪ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০.৭৭ বিলিয়ন ডলার—টানা পাঁচ মাস ধরে ২০ বিলিয়নের ওপরে রয়েছে। এটি বাজারে আস্থা ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করছে।