শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করা ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থী মেহরীন আহমেদ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। মেয়ের মানসিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাজের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তার বাবা-মা।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকার নিম্ন আদালতের কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (সিআরইউ) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মেহরীনের আইনজীবী ইশফাকুর রহমান গালীব এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, মেহরীনের মা তাকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন, মামলা সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেহরীনকে ঘিরে নেতিবাচক মন্তব্য ও বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। এতে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাবা-মা চান, তাদের মেয়ে যেন এসব নেতিবাচকতা থেকে মুক্ত থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, মেহরীন বর্তমানে বাবা-মায়ের সঙ্গেই একই বাসায় থাকেন, পাশাপাশি রুমে ঘুমান, একই টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং একই গাড়িতে চলাফেরা করেন। তবে দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন না, যোগাযোগ হয় শুধু মেসেজে। তাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব না থাকলেও মানসিক দূরত্ব স্পষ্ট। এই দূরত্ব দূর করে আবার পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান উভয় পক্ষ।
তিনি আরও বলেন, “মেহরীনের ঘটনাটি সমাজের জন্য একটি শিক্ষা হওয়া উচিত। বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া তৈরি হওয়া প্রয়োজন। সন্তানদের শাসন করতে হলে তা যেন সুশাসনের মধ্যে থাকে এবং ভালোবাসার মাধ্যমে হয়। একইসঙ্গে সন্তানদেরও পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
মেহরীন শুধু একজন শিক্ষার্থী নন, বরং তিনি একজন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়ান, যাদের মধ্যে একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কন্যাও রয়েছেন। তার ইংরেজি দক্ষতা চমৎকার, যা তাকে ভবিষ্যতে দেশের একটি সম্পদে পরিণত করতে পারে বলে জানান আইনজীবী।
মেহরীনের বাবা-মা আইনজীবীকে দেওয়া চিঠিতে আরও বলেন, “আমাদের একমাত্র কন্যা মেহরীন দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ থেকেই হয়তো সে আদালতে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা চাই সে সুস্থ থাকুক, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোক এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা লাভ করুক।”
উল্লেখ্য, গত ২২ জুন মেহরীন তার বাবা নাসির আহমেদ ও মা জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে নিজের সুরক্ষার জন্য ঢাকার একই আদালতে মামলা করেন। পরে ১০ জুলাই মামলার শুনানিতে আদালতে উপস্থিত হয়ে মেহরীন বলেন, “আমি বাবা-মায়ের পাপেট নই। আমাকে কেন গালাগালি করা হবে? কেন শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতন করা হবে? আমি কেবল সুরক্ষা চাই।”