বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) চলমান অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার তাদের তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল—বিসিবির নতুন গঠনতন্ত্র, তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের বাছাইপর্ব এবং আর্থিক অনিয়ম।
সোমবার চার সদস্যের একটি দুদক টিম বিসিবিতে উপস্থিত হয়ে দিনভর নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা তৃতীয় বিভাগের খেলোয়াড় বাছাই প্রক্রিয়ায় অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। যদিও নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে সিসিডিএমকে (সেন্ট্রাল জোন ক্রিকেট কমিটি) প্রক্রিয়াগত ত্রুটির জন্য দায়ী করা হয়েছে।
বাছাইয়ে অযৌক্তিক শর্ত, প্রতিভাবানদের বাধা
তদন্ত শেষে দুদক কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালের পর তৃতীয় বিভাগে অংশগ্রহণের নিয়মে এমন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যা অনেক ক্লাবের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। এতে তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় উঠে আসার পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। এক কর্মকর্তা বলেন,
“এখন ২-৩টির বেশি দল অংশ নিতে পারে না, যা প্রতিযোগিতাকে সীমিত করে ফেলেছে। এতে জাতীয় দলের জন্য প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের যোগান কমে যাচ্ছে।”
তারা আরও বলেন, এসব শর্ত অনেকটাই দেশের বাস্তবতা ও ক্লাবগুলোর আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের সুযোগ প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়ছে।
গঠনতন্ত্রেও অসঙ্গতি
বিসিবির গঠনতন্ত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দুদক। তাদের দাবি, যে রায় অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধিত হওয়ার কথা ছিল, সেটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
এক কর্মকর্তা বলেন,
“গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিসিবিকে একটি সংগঠিত কাঠামোয় পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে।”
চাকরি বিধিমালা নিয়েও রয়েছে অনিয়ম। কর্মকর্তার ভাষ্য,
“একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিচালিত করতে যেভাবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন হয়, বিসিবিতে তার অভাব দেখা গেছে। এটা নিয়ে আমরা আরও গভীরভাবে যাচাই করব।”
আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে আরও তদন্ত চলবে
তদন্ত দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আর্থিক অনিয়ম সম্পর্কিত অভিযোগ এখনই চূড়ান্তভাবে যাচাই করা হয়নি। বিষয়টি আরও বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ।
পরবর্তী পদক্ষেপ
তদন্তের প্রাথমিক তথ্য ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করবে দুদক। এরপর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।