যুক্তরাজ্য বর্তমানে এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে রয়েছে—যেখানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অসন্তোষ, জনবিচ্ছিন্নতা এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকি একত্রে দেশটিকে চাপে ফেলেছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল ও প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় জানানো হয়েছে, দেশ এমন এক যুদ্ধপরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে, যার জন্য জনগণ মোটেই প্রস্তুত নয়।
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আস্থা কমে যাওয়ায়, রিফর্ম ইউকে-এর মতো ডানপন্থী, অভিবাসনবিরোধী দলগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এক সময়ের শ্রমজীবী মানুষের দল লেবার পার্টি এখন উচ্চ আয়ের ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছে, যেখানে রিফর্ম ইউকে নিচু আয়ের, কম শিক্ষিত ও ব্রেক্সিটপন্থী ভোটারদের আকৃষ্ট করছে।
নাইজেল ফারাজের দলটি দুই-সন্তান ভাতা বাতিল, পেনশনভোগীদের সুবিধা পুনর্বহাল এবং নির্দিষ্ট খাতে জাতীয়করণের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে জনসমর্থন বাড়াচ্ছে।
রিফর্ম ইউকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতির পক্ষে, যা বাংলাদেশি, মুসলিম ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নীতিগুলো জীবনের নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়াতে পারে—বিশেষ করে কর্মসংস্থান, আবাসন ও পারিবারিক পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে।
হোম অফিস ইতিমধ্যেই পারিবারিক ভিসায় কঠোরতা এনেছে, যার ফলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো ভিসা পেতে বাধার মুখে পড়ছে। এসব সিদ্ধান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
যুক্তরাজ্যে বাকস্বাধীনতা নিয়েও বৈষম্য স্পষ্ট। যেমন, কুরআন পোড়ানোকে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ হিসেবে মেনে নেওয়া হলেও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভগুলোর ওপর দ্রুত পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটি সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে অবজ্ঞার অনুভূতি তৈরি করছে।
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক ব্রিটিশ নাগরিক কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের হয়ে অস্ত্র হাতে নিতে আগ্রহী নন। অথচ সরকার প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—২০২৯ সালের মধ্যে জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাজ্যের জন্য কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। তার প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ব্রিটিশ রপ্তানির ওপর বড় ধাক্কা দিতে পারে। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় £৬০ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।