লেবার পার্টির টিকিটে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী এমপি—রুশনারা আলী (বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো), আপসানা বেগম (পপলার অ্যান্ড লাইমহাউজ), রূপা হক (ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন) এবং টিউলিপ সিদ্দিক (হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট)—তাদের আসনগুলো এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।
ইউগভের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ঐতিহ্যগতভাবে লেবার-ঘেঁষা এসব আসনেও এবার হুমকি হয়ে উঠছে ডানঘরানার দল রিফর্ম ইউকে। বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের আসনগুলোতে বাংলাদেশি এবং মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শিশু ভাতা সংশোধনী নিয়ে লেবার পার্টির অবস্থানের বিপরীতে ভোট দিয়ে আপসানা বেগম হারিয়েছেন দলের হুইপ। এতে তার পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তিনি যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান, তবে লেবার ভোট বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা রিফর্ম ইউকের মতো দলের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য নীতি, গাজা যুদ্ধ ও অভিবাসন প্রশ্নে লেবার-কনজারভেটিভ উভয় দলের ওপর মুসলিম ভোটারদের আস্থা কমেছে। এই প্রেক্ষাপটে রিফর্ম ইউকে এখন দক্ষিণ এশীয় পটভূমির মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করানোর চিন্তা করছে। দলের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে মুসলিম রাজনীতিক জিয়া ইউসুফকে আনার পেছনেও এই কৌশল কাজ করেছে।
রিফর্ম ইউকে অভিবাসন হ্রাসে ‘নেট জিরো’ নীতির পক্ষে। তারা নাগরিকত্বের যোগ্যতার সময়সীমা বাড়ানো, সামাজিক ভাতা কড়াকড়ি করা এবং সরকারি ব্যয় কমানোর পক্ষে। এসব নীতি বাংলাদেশিসহ অভিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারি তথ্য বলছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের হার তুলনামূলকভাবে খারাপ।
রিফর্ম ইউকের উত্থান শুধু ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্যই আনছে না, এটি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্যও এক পরীক্ষার সময়। ঐতিহাসিকভাবে লেবার-ঘেঁষা ভোট ব্যাংক কীভাবে সাড়া দেবে, তা নির্ধারণ করবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
আগামী সাধারণ নির্বাচন কেবল সরকার গঠনের প্রশ্ন নয়—এটি হয়ে উঠতে পারে ব্রিটেনের জাতিগত ও রাজনৈতিক পরিচয় নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার এক সন্ধিক্ষণ। বিশেষ করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের জন্য এ নির্বাচনের ফলাফল বহন করবে দীর্ঘমেয়াদি তাৎপর্য।