নববর্ষের আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বাংলা ১৪৩২ সালের প্রথম দিনটি উদযাপন করতে দেশজুড়ের হাজারো পর্যটক ভিড় জমিয়েছেন এখানে। কেউ সাগরের নোনা জলে স্নানে মেতেছেন, কেউ বা নেচে-গেয়ে, আর কেউ গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা আয়োজনে দিনটি কাটিয়েছেন উৎসবমুখর পরিবেশে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৮টায় কক্সবাজার সৈকতের সীগাল পয়েন্ট থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ শোভাযাত্রা, যা লাবনী পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। এরপর লাবনী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—নাচ, গান আর লোকজ পরিবেশনায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। দুই ঘণ্টাব্যাপী এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও পুলিশ সুপার সাইফউদ্দিন শাহীন।
সকাল ১০টার পর থেকেই সৈকতে মানুষের ঢল নামে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষ সাগরের জলে নেমে উপভোগ করেন বর্ষবরণের আনন্দ। কেউ খেলায় মেতে উঠেছেন, কেউ স্মৃতির ছবি তুলে রাখছেন ক্যামেরায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সৈকতপাড়ের হোটেল-মোটেলগুলোও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। পর্যটকরাও রঙিন পোশাকে, উৎসবের আবহে যোগ দেন এই আনন্দে।
সৈকতের পাশে বসেছে বৈশাখী মেলা। স্টলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে দেশীয় হস্তশিল্প, পিঠা-পুলি, ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। ছিল রিং খেলা, কুইজ ও অন্যান্য আনন্দ আয়োজনে মাতোয়ারা ছোট-বড় সবাই।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লোকমান করিম জানান, “নববর্ষের টানা ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে এখন সাগরস্নান শেষে ছাতার নিচে বিশ্রাম নিচ্ছি—কারণ গরম বেশ অনুভব হচ্ছে।”
রংপুর থেকে আসা আরেক পর্যটক হাসান ইব্রাহীম বলেন, “পহেলা বৈশাখে কক্সবাজারে এসে দারুণ লাগছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের এমন মিলনমেলা সত্যিই অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।”
হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, পর্যটকদের জন্য বিশেষ বৈশাখী আয়োজন রাখা হয়েছে যাতে তারা আনন্দের পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতির স্বাদ নিতে পারেন।
পুলিশ সুপার সাইফউদ্দিন শাহীন বলেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রয়েছে। দিন-রাত ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
শুধু কক্সবাজার শহর নয়, আশেপাশের এলাকা—দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটোয়ারটেক, শামলাপুর ও টেকনাফ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই বর্ষবরণের আনন্দ। কেউ পাহাড়-ঝর্ণা দেখতে যাচ্ছেন, কেউ বা মহেশখালী, সোনাদিয়া, রামুর বৌদ্ধবিহার কিংবা চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও সময় কাটাচ্ছেন।
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ তাই শুধু সাগরের ঢেউয়ে নয়, ধ্বনিত হচ্ছে পাহাড়-নদী, বন-সাগরের প্রতিটি প্রান্তে।