আল্লাহর সৃষ্টিজগতে উট এক অপূর্ব বিস্ময়। কোরআনে বলা হয়েছে:
“তারা কি উটের দিকে তাকিয়ে দেখে না—কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?”
(সুরা গাশিয়া, আয়াত ১৭)
এই আয়াতটি যেন উটের প্রতি আমাদের দৃষ্টি ফেরায়, যে প্রাণীটি শুধুই বাহনের উপযোগী নয়—বরং প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার এক বিস্ময়কর উদাহরণ। তার শরীরের গঠন, সহ্যশক্তি, খাদ্যাভ্যাস, এমনকি চোখের পাপড়ি পর্যন্ত যেন প্রমাণ করে—এটি নিছকই একটি প্রাণী নয়, বরং আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টিশক্তির প্রতিচ্ছবি।
🔥 প্রচণ্ড গরমে অটল
উট ৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এবং আবার মাইনাস ১ ডিগ্রিতেও টিকে থাকতে পারে। উত্তপ্ত মরুভূমিতে দিনের পর দিন তারা পায়ের নিচে জ্বলন্ত বালু নিয়েও স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটে। অথচ অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণী, এমনকি মানুষও ৪০ ডিগ্রির আশপাশে শরীরের ভেতরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি শুরু হয়।
উটের শরীরে রয়েছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের চমৎকার ব্যবস্থা—সকালে শরীরের তাপমাত্রা থাকে ৩৪ ডিগ্রি, আর দুপুরে তা বেড়ে গিয়ে হয় ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত। অথচ তখনও তারা ঘাম ঝরিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখে, তবে পানি অপচয় করে না।
💧 পানির আশ্চর্য ধারণক্ষমতা
উট একবার বসে মাত্র ১০ মিনিটে খেয়ে ফেলতে পারে ১৩০ লিটার পানি! এই পরিমাণ পানি যদি অন্য কোনো প্রাণীর রক্তে প্রবেশ করত, তাহলে রক্তকণিকাগুলো ফেটে যেত। কিন্তু উটের রক্তকণিকা এতটাই দৃঢ় ও নমনীয় যে তা এই চাপ সহজেই সহ্য করে।
🏜 কুঁজের রহস্য
উটের কুঁজ হলো চর্বি জমার আধার। এটি কেবল শক্তির উৎস নয়, বরং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। পানি ও খাদ্য জমিয়ে রেখে উট কয়েক মাস পর্যন্ত না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
🌵 কঠিন খাদ্য, সহজ হজম
উট এমন গাছও খেতে পারে, যেগুলোতে কাঁটা থাকে, যেমন ক্যাকটাস। অন্য কোনো প্রাণী এর ধারেকাছে গেলেই মুখে ক্ষত হতো। কিন্তু উটের মুখে রয়েছে বিশেষ গঠন—যেন ছোট ছোট আঙুলের মতো মাংসপিন্ড, যা মুখকে রক্ষা করে ও কাঁটা সহ্য করতে সাহায্য করে।
👁 চোখের পর্দা—ধূলিঝড়ের ঢাল
উটের চোখে রয়েছে দুটি পাপড়ি। ধুলিঝড়ে চলার সময়েও এই পাপড়িগুলো চোখ আড়াল করে রাখে, রোদ থেকে রক্ষা করে এবং চোখে আর্দ্রতা বজায় রাখে। বাঁকানো পাপড়িগুলো ধুলো আটকায় এবং চোখে ঢুকতে দেয় না।
🐪 শান্ত, বিশ্বস্ত, সহনশীল
উটের ওজন প্রায় ১৮০ থেকে ২৬০ কেজি। এত বড় প্রাণী হয়েও এরা অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের, মানুষের প্রতি অনুগত। তারা শত শত মাইল হেঁটে চলতে পারে, পিঠে দেড় কেজি ওজন নিয়ে। উটের আচরণে সহিষ্ণুতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় মেলে।
📜 কোরআনে উটের গুরুত্ব
উট শুধু বাহন নয়, মরুভূমির জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোরআনে আল্লাহ উটকে মানুষের জন্য উপযোগী করে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন, যাতে তা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করে।