যুক্তরাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায় প্রতি বছরের মতো এবারও শবেবরাত অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন মসজিদে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পবিত্র এই রাতটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উদযাপন করা হয়। তবে ব্রিকলেন মসজিদ ছিল অন্যতম প্রধান কেন্দ্র, যেখানে সারারাতব্যাপী বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই রাতটি মুসলিমদের জন্য একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সময়, যেখানে তারা আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা, দয়া এবং রহমত প্রার্থনা করেন।
এ বছর ব্রিকলেন মসজিদে অনুষ্ঠিত শবেবরাতের ওয়াজ মাহফিলটি ছিল অত্যন্ত আধ্যাত্মিক ও শিক্ষণীয়। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামি বক্তা মাদানী চিন্তা-ধারায় গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেন। বক্তারা শবেবরাতের রাতের বিশেষত্ব, তার মহিমা এবং ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময় মুসল্লিরা গভীর মনোযোগ সহকারে তাদের উপদেশ গ্রহণ করেন।
এছাড়া, শবেবরাতে মিলাদ মাহফিলও আয়োজন করা হয়। এই মাহফিল রাতভর চলতে থাকে এবং এতে হাজারো মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। মসজিদে সকাল অবধি ইবাদত ও দোয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যেখানে মুসল্লিরা একে অপরের জন্য দোয়া করেছেন এবং নিজেদের জীবনে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছেন। বিশেষভাবে শবেবরাতে রোজা পালন করার জন্য সেহরি ব্যবস্থা করা হয়, যাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ইবাদত করতে পারেন।
মসজিদে ইবাদত করার সুবিধার্থে সারা রাত মসজিদগুলো খোলা রাখা হয়। এ সময় মসজিদে জমায়েত হওয়া মুসল্লিরা শবেবরাতের ফজিলত উপভোগ করার জন্য নিজেদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অনেকেই রাত জেগে নামাজ, তিলাওয়াত, তাসবিহ, ও দোয়া করেছেন।
এ সময় ব্রিকলেন মসজিদের খতিব মাওলানা নজরুল ইসলাম এবং সেকেন্ড ইমাম মাওলানা মারুফ আহমদ উপস্থিত ছিলেন, যারা পুরো অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন। মসজিদের হাফিজরা, যেমন হাফিজ মতিউল হক ও হাফিজ সাজ্জাদুর রহমানও শবেবরাতে কোরআনের তিলাওয়াত করেন, যা মুসল্লিদের হৃদয়ে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে মাওলানা আব্দুল মালিক এবং মাওলানা আশরাফুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তারা নিজেদের বক্তৃতায় মুসল্লিদের শবেবরাতের গুরুত্ব এবং সঠিক ইবাদতের দিকনির্দেশনা দেন। মসজিদের ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরল হক লালা মিয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরু উদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলিয়াস মিয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মুসাব্বির দুলু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আলী এবং ইউসুফ কামালী।
এ দিনটি ছিল সবার জন্য একটি আধ্যাত্মিক উত্থানের সুযোগ, যেখানে মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও শান্তির আবেদন জানান। শবেবরাতে ইবাদত, দোয়া, মিলাদ এবং ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের মুসলিমরা তাদের আধ্যাত্মিক জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন, এবং আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও বরকত লাভের জন্য নিজ নিজ জীবনকে সংশোধন করার অঙ্গীকার করেছেন।