উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) ছিলেন ইসলামের সোনালি যুগের এক প্রজ্ঞাবান, গভীর জ্ঞানে ভাস্বর ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় নারী। তিনি ছয় লক্ষ হাদিস ও সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করেছিলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে নিয়ে বলেন, “তোমরা আয়েশা থেকে তোমাদের দ্বীনের অর্ধেক জ্ঞান শিখে নাও।”
শুধু নারীদের নয়, তিনি পুরুষদেরও দ্বীনি শিক্ষা দিতেন। তাঁর শিক্ষাদান, জ্ঞানব্যপ্তি এবং ফতোয়া প্রদানের পরিধি এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, অনেক সাহাবী (রা.) পর্যন্ত দ্বীনের কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে তাঁর কাছেই জিজ্ঞেস করতেন।
নারীদের শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা
ইসলামের প্রথম যুগে ১৫৪৩ জন নারী সাহাবী ছিলেন, যারা জ্ঞান, সভ্যতা, চিকিৎসা ও বক্তৃতায় পুরুষদের সমকক্ষ ছিলেন। আয়েশা (রা.), উম্মে সালমা (রা.), হাফসা (রা.), উম্মে হাবিবা (রা.) সহ অনেকেই ছিলেন হাদিস সংরক্ষক ও বর্ণনাকারী। তাঁদের থেকে শত শত পুরুষ আলেম হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
আয়েশা (রা.)-এর জ্ঞানের ব্যাপ্তি
আবু মূসা আশআরী (রা.) বলেন, “যখনই সাহাবাদের কোনো বিষয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিত, তারা আয়েশা (রা.)-এর কাছে যেতেন এবং স্পষ্ট জবাব পেতেন।”
আবু সালামা (রা.) বলেন, “আমি আয়েশার মতো কেউকে দেখিনি, যিনি নবীজির সুন্নত, কোরআনের শানে নুযুল, ফারায়েজ ও ইসলামী বিধান সম্পর্কে এতটা গভীর জ্ঞান রাখেন।”
তাঁর জ্ঞানী পরিচয় অন্য সাহাবীদের চোখে
মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, “আয়েশার চেয়ে অধিক প্রাঞ্জল ও যুক্তিসম্মত বক্তা আমি দেখিনি।”
ওরওয়া (রহ.) বলেন, “চিকিৎসা, কবিতা ও ফিকহশাস্ত্রে আয়েশার জ্ঞানের পরিধি অতুলনীয়।” আয়েশা (রা.) নিজেই বলতেন, “নবীজি (সা.) অসুস্থ হলে আরব-অনারব চিকিৎসকেরা ওষুধ পাঠাতেন। আমি সেগুলো থেকেই চিকিৎসাবিজ্ঞান শিখেছি।”
ইসলামের হাদিস সাহিত্যে অবদান
আয়েশা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০টি, যা তাঁকে ইসলামী জ্ঞানের অন্যতম বড় উৎসে পরিণত করেছে। ইমাম জুহরী (রহ.) বলেন, “এই উম্মতের সব নারীর জ্ঞান একত্র করলেও, আয়েশার জ্ঞান তাদের সকলের চেয়ে বেশি হবে।”