কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় বিধান নয়, বরং এটি সমাজ, অর্থনীতি ও মানবিকতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এর রয়েছে বহু ইহকালীন উপকারিতা, যার কিছু নিচে তুলে ধরা হলো:
১. খামারিদের আর্থিক সচ্ছলতা:
গ্রামগঞ্জের খামারিরা কোরবানির মৌসুমকে সামনে রেখে গরু, ছাগল, মহিষ পালন করেন। কোরবানির সময় এসব পশু বিক্রি করে তারা আর্থিকভাবে উপকৃত হন।
২. কর্মসংস্থান:
পশুর হাট বসলে সেখানে অনেক ধরনের কাজ সৃষ্টি হয়—পরিবহন, পশু পরিচর্যা, কেনাবেচা ইত্যাদিতে বহু মানুষ কাজের সুযোগ পান, যা তাদের জীবিকার পথ খুলে দেয়।
৩. সরকারের রাজস্ব আয়:
পশুর হাটে হাসিল বা করের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে উল্লেখযোগ্য অর্থ জমা হয়। এতে দেশের রাজস্ব আয় বাড়ে।
৪. দরিদ্রদের সহায়তা:
কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন এতিমখানা, মাদ্রাসা ও দরিদ্র মানুষের উপকারে আসে।
৫. চামড়াশিল্পের উন্নয়ন:
চামড়া একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পণ্য। এটি দিয়ে তৈরি হয় জুতা, ব্যাগ, আসবাবপত্র ইত্যাদি। দেশে গড়ে ওঠা ট্যানারি শিল্পে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
৬. গরিবের ঘরে মাংস পৌঁছে যায়:
সাধারণ সময়ে দরিদ্ররা গরুর মাংস কিনে খেতে পারে না। কোরবানির সময় সমাজের প্রতিটি স্তরে মাংস পৌঁছে যায়, যা তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক।
৭. কোনো অংশই অপচয় হয় না:
কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া, হাড়, পশম, এমনকি গোবর—সব কিছুই কোনো না কোনোভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই এটি একেবারে সম্পদে পরিণত হয়।
৮. ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ:
আল্লাহ মানুষকে এমন দাঁত দিয়েছেন, যাতে তারা শাকসবজি ও মাংস—দুটোই খেতে পারে। কেবল এক ধরনের খাদ্য খেলে শরীরে অপুষ্টি হতে পারে। তাই মাংস খাওয়াও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।
৯. প্রকৃত ব্যবহারই ইনসাফ:
গাছেও জীবন আছে, তাই গাছ কাটাও জীবন বিনাশ। কিন্তু আল্লাহ যাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সেই কাজে ব্যবহার করাই ইনসাফ। সৃষ্টিকে তার উপযুক্ত ব্যবহারে নিয়োজিত করাই ন্যায্যতা।
১০. অন্য ধর্মেও পশু বলি রয়েছে:
অন্যান্য ধর্মেও নানা উৎসবে প্রাণী বলি দেওয়া হয়। হিন্দু ধর্মে পাঠা বলি, জাপানে ডলফিন শিকারসহ অনেক ঘটনা দেখা যায়। অথচ সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় মুসলমানদের কোরবানি নিয়ে, যা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিরুদ্ধেই অপপ্রচার।
কোরবানি ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ এনে দেয়। এটি শুধু পশু জবাই নয়, বরং ত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতীক। কোরবানির পরিবর্তে শুধু দান করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী কোরবানি করাই মূল কাজ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কোরবানির গুরুত্ব বুঝে তা যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দিন। আমিন।