প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক খ্যাতনামা বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান শ্যাক্সে সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে খণ্ডকালীন কাজ শুরু করেছেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এটি তার নতুন পেশাগত ভূমিকা।
ব্যাংকটি জানিয়েছে, বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে সুনাকের “অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্তর্দৃষ্টি” তাদের ক্লায়েন্টদের পরামর্শে কাজে লাগানো হবে। ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি সুনাক বিশ্বজুড়ে ব্যাংকের কর্মীদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন এবং প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবেন।
গোল্ডম্যান শ্যাক্সের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ডেভিড সলোমন বলেন, “আমরা ঋষিকে আবার আমাদের মধ্যে পেয়ে আনন্দিত।”
সুনাক তার এই উপদেষ্টা ভূমিকার জন্য পাওয়া বেতন ‘দ্য রিচমন্ড প্রজেক্ট’-এ দান করবেন। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা যুক্তরাজ্যজুড়ে গণিত শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে এবং এটি সুনাক ও তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সরকারি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর নতুন কাজ নেওয়া সংক্রান্ত বিষয় তদারক করে এমন ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাকোবা (ACoBA) জানিয়েছে, সুনাকের নতুন পদ কিছু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, তিনি গোল্ডম্যান শ্যাক্সকে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ের গোপন তথ্য দিয়ে কোনও সুবিধা দিতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ কারণে সুনাককে কিছু কঠোর শর্তের মধ্যে থাকতে হবে:
-
তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে ব্যাংকের জন্য লবিং করতে পারবেন না।
-
প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় যেসব ক্লায়েন্টের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন, তাদের কোনো পরামর্শ দিতে পারবেন না।
-
কোনো বিদেশি সরকার বা ব্যাংককে তাদের সার্বভৌম তহবিল পরিচালনায় সহায়তা করতে পারবেন না।
রাজনীতিতে আসার আগে সুনাক প্রায় ১৪ বছর আর্থিক খাতে কাজ করেছেন, যার মধ্যে গোল্ডম্যান শ্যাক্সে বিশ্লেষক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০০০ সালে ইন্টার্ন হিসেবে ব্যাংকে যোগ দেন এবং ২০০১-২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হন।
২০১৫ সালে তিনি প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন এবং কোভিড মহামারির সময় বরিস জনসনের অধীনে চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লকডাউনের সময় অর্থনৈতিক সহায়তা প্রকল্প ঘোষণা করে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
২০২২ সালের জুলাই মাসে চ্যান্সেলরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যা বরিস জনসনের সরকারের পতনের পথ প্রশস্ত করে। এরপর লিজ ট্রাসের স্বল্পমেয়াদি শাসনের পর তিনি অক্টোবর ২০২২-এ প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির ঐতিহাসিক পরাজয়ের পর পদত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর সুনাক যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভাটনিক স্কুল অফ গভর্নমেন্ট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হুভার ইনস্টিটিউশন-এ অবৈতনিকভাবে যুক্ত হন।
তবে তিনি এপ্রিল ২০২৫ সাল থেকে তিনটি বক্তৃতা দেওয়ার বিনিময়ে ৫ লাখ পাউন্ডেরও বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন। উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে বড় বড় করপোরেট সংস্থা ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার চল রয়েছে।