টিলা কাটা: সিলেটের পরিবেশ বিপর্যয়ের অশনিসংকেত
সিলেটে টিলা কাটা বর্তমানে এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য টিলাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এগুলো এখন নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণে আইনি বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও টিলা কাটা কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আলোচনায় উঠে এসেছে যে, ২০০৯ সালে সিলেটে ১০২৫টি টিলা ছিল, যা ২০২৩ সালে এসে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৬৫টিতে।
অতিথিদের বক্তব্যে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা, আইন প্রয়োগের অভাব এবং রাজনৈতিক প্রভাব এই টিলা কাটা বন্ধে বড় বাধা। টিলাকে পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা প্রদান এবং কৃষি কাজের অজুহাতে টিলা ধ্বংস করাচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক বাসস্থান হারিয়ে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে প্রবেশ করছে এবং প্রাণহানি ঘটছে।
আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিলেটে টিলা কাটা সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ জন। এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ না হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের আরও বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। চা শিল্পেও এর প্রভাব পড়ছে, শ্রমিকদের আয়ে সংকট তৈরি হচ্ছে।
প্রধান অতিথি সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হোসাইন মো. আল-জুনায়েদ বলেন, টিলাগুলো রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, টিলা কেটে কৃষিকাজের চেয়ে টিলাগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অতিথি পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমানের মতে, টিলা সংরক্ষণে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা বলেন, “যে জিনিস সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই, তা ধ্বংস করার অধিকারও কারও নেই। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য টিলা সংরক্ষণ অপরিহার্য।”
সরকারি, বেসরকারি এবং নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে টিলা কাটা বন্ধ করা না গেলে, সিলেটের পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।