লন্ডন, এপ্রিল ২০২৫: ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই মাসে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে বিশ্লেষকরা মাত্র ০.১ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (ONS) জানিয়েছে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল অবদান রেখেছে পরিষেবা খাত, বিশেষ করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, টেলিকম ও গাড়ির ডিলারশিপ। একই সঙ্গে উৎপাদন খাত এবং ওষুধ ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পেও ভালো অগ্রগতি দেখা গেছে। এমনকি গাড়ি উৎপাদনেও ফের গতি এসেছে, যা আগের মাসগুলোতে দুর্বল ছিল।
প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির এই ইতিবাচক ফলাফল স্বল্পস্থায়ী হতে পারে। কারণ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ব্রিটিশ রপ্তানিকারকদের ক্ষতি করতে পারে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়া এপ্রিল থেকে কর বৃদ্ধি, জাতীয় বীমা অবদানের পরিবর্তন এবং বাড়তি ইউটিলিটি বিলের চাপও সাধারণ মানুষ ও ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলবে।
চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস এই প্রবৃদ্ধিকে “উৎসাহব্যঞ্জক লক্ষণ” বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “এখন আত্মতুষ্টির সময় নয়। আমাদের আরও দ্রুত এগোতে হবে, কর্মজীবী মানুষের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের আয়ের উন্নতি ঘটাতে হবে।”
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে
ওয়ারউইকশায়ারের ৩ডি প্রিন্টিং কোম্পানির মালিক মিচেল বার্নস জানিয়েছেন, তার ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রে যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে। তবে ট্রাম্প সরকারের নতুন শুল্কের পরিবর্তে, তার ব্যবসার ওপর এখন সবচেয়ে বেশি চাপ ফেলছে অভ্যন্তরীণ খরচ বৃদ্ধির বিষয়গুলো।
তিনি জানান, জাতীয় বীমা ও ন্যূনতম মজুরির নতুন নিয়মের কারণে তাকে কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা কমাতে হয়েছে। আগে যেখানে ১৮ মাসে ১০০ কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য ছিল, এখন তা কমিয়ে ৩০-৪০ জনে নামিয়ে এনেছেন।
ONS-এর সংশোধিত তথ্য
ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি, জানুয়ারির জিডিপি পরিসংখ্যানও সংশোধন করেছে ONS। আগে জানানো হয়েছিল, ওই মাসে অর্থনীতি ০.১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, জানুয়ারিতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি, তবে অর্থনীতিও কমেনি।
চিত্রটা কতটা ভালো?
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসিক জিডিপির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ৯ মাসে মাত্র ৪টি মাসে অর্থনীতি বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞ রুথ গ্রেগরি বলেন, “এই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি খুব বেশি দিন টিকবে না। কারণ কর ও শুল্কের বাড়তি চাপ এখন ধীরে ধীরে প্রভাব দেখাবে।”