বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ড. ইউনূসের আশাবাদ
বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার ফিরে আসার আশঙ্কা নাকচ করে দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম উদার চিন্তা-চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের তরুণেরা ধর্মের ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীন এবং দেশকে সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ইকোনমিস্টের বিদেশবিষয়ক সম্পাদক প্যাট্রিক ফোলিস এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। বাংলাদেশের তরুণদের প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন এসেছে। ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে, এবং আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এগোচ্ছি।”
ইকোনমিস্টের সম্পাদক জানতে চান, ইসলামি চরমপন্থা ফিরে আসার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সতর্কতার কী জবাব দেবেন। উত্তরে ড. ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেন, “বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। তরুণ প্রজন্ম উদার, উদ্যমী এবং নতুন বাংলাদেশের নির্মাণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তরুণেরা শুধু আশা দেখাচ্ছে না, তারা পরিবর্তনের দিশাও দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের তরুণীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে তরুণীরা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা গতানুগতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে।
ড. ইউনূস জানান, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিনজন তরুণকে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের কর্মদক্ষতা এই প্রজন্মের শক্তি ও সম্ভাবনার উদাহরণ। তিনি বলেন, “তারা অসাধারণ কাজ করছে। আমাদের তরুণদের স্বপ্ন পূরণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া উচিত।”
সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে তিনি ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, “আমাকে আমার আগের কাজ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছিল। আমি আমার পুরোনো কাজে ফিরে যেতে চাই, যেখানে আমি সত্যিকার অর্থে আনন্দ পাই। দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারলে সেটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।”
বাংলাদেশের নতুন যাত্রাপথে তরুণদের উদার চিন্তা ও দৃঢ় সংকল্পই হবে দেশের অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি—এমনই দৃঢ় বিশ্বাস ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।