অনেক কোরআনের হাফেজ রমজান এলেই তারাবি কোথায় পড়াবেন তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ঢাকা শহরে রমজানে মসজিদের তুলনায় হাফেজদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সব হাফেজ মসজিদে তারাবি পড়ানোর সুযোগ পান না। ফলে, অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে—বাসা-বাড়িতে তারাবির জামাত করানো যাবে কি না?
প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহিহ হাদিসের আলোকে জানা যায় ফরজ ব্যতীত অন্য নামাজ বাসায় আদায় করা অধিক সাওয়াবের কাজ। তাই হাফেজ সাহেবগণ যদি মসজিদে ইমামতির সুযোগ না পান, তাহলে দুঃখিত না হয়ে বরং নিজেদের বা অন্য কারও বাড়িতে তারাবির জামাতের ব্যবস্থা করতে পারেন।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করো, কেননা ফরজ নামাজ ব্যতীত মানুষের জন্য সেরা নামাজ হলো তার বাড়িতেই আদায়কৃত নামাজ।’ (বুখারি ৭৩১)
হজরত উমর (রা.)-এর সময় সাহাবিরা কেউ একা, কেউ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারাবি পড়ছিলেন। তখন তিনি সবার জন্য সম্মিলিত জামাতের ব্যবস্থা করেন এবং বলেন, ‘এটি কতই না চমৎকার একটি নতুন নিয়ম (বিদআতে হাসানাহ)!’ (মুয়াত্তা মালিক ৩০১)
তবে লক্ষ্যণীয় যে, হজরত উমর (রা.) নিজে এই জামাতে শরিক হতেন না। তাছাড়া, হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.), যিনি মসজিদে তারাবির ইমাম ছিলেন, তিনি রমজানের শেষ দশকে বাসায় তারাবি পড়তেন।
মসজিদে তারাবির জামাত আয়োজন করা সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে চলে আসা একটি প্রতিষ্ঠিত আমল। এটি সুন্নাত এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য মোটেই মসজিদের জামাতের গুরুত্ব কমিয়ে দেখা নয়।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তারাবির নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সময় সংবাদ
তবে যারা ঘরে অত্যন্ত যত্ন ও পরিপূর্ণ প্রস্তুতির সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করতে সক্ষম, তাদের জন্য এটি একটি উত্তম বিকল্প হতে পারে। সঠিক উপলব্ধি এবং ইখলাসের সঙ্গে বাসায় তারাবি আদায় করলে এটি এক মহান ইবাদতে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ।
বাসায় তারাবির জামাতের উপকারিতা
বরকতময় পরিবেশ সৃষ্টি: বাসায় তারাবি পড়ার মাধ্যমে ঘরে পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত ধ্বনিত হবে, যা অত্যন্ত বরকতময় পরিবেশ তৈরি করবে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও ঘরে কোরআন তিলাওয়াত ও নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
নারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ: বাসায় তারাবি পড়লে পরিবারের মা-বোনরা সহজেই এই বরকতময় ইবাদতে অংশ নিতে পারবেন এবং দীর্ঘ নামাজের সওয়াব অর্জন করবেন।
শিশুদের নিরাপত্তা: অনেক সময় ছোট বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে গেলে তাদের কোলাহলের কারণে নামাজে বিঘ্ন ঘটে, এমনকি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। কিন্তু ঘরে তারাবি পড়লে এই সমস্যা হবে না।
শিশুদের নামাজের প্রতি আগ্রহ: বাসায় তারাবির জামাত হলে শিশুদের মধ্যেও নামাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে এবং মায়েদের মনে সন্তানদের হাফেজ বানানোর আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেবে।
লেখক: শাইখুল হাদিস, জামিয়া শারিফিয়া আরাবিয়া, লালবাগ, ঢাকা