বিবাহিত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ৩ দোয়া
নবীজি বিয়েকে দীনের অর্ধেক বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিয়ে জীবনের অনুষঙ্গ বিষয়ও। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে বিয়ে করল, সে তার অর্ধেক দীন-ঈমান পূর্ণ করল। সে যেন বাকি অর্ধেকের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে।’ (তাবরানি)
সহবাসের দোয়া
বিবাহিত জীবনে নবীজির শেখানো কিছু দোয়া রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বিবাহিত জীবন সুখময় হয়ে ওঠে। শয়তানের কু-দৃষ্টি থেকে আল্লাহ তাআলা হেফাজত করেন। স্বামী-স্ত্রী সহবাস করতে চাইলে রাসুল সা. শেখানো এ দোয়া পড়বে। এতে শয়তান তাদের দিকে নজর দিতে পারবে না।
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ। আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দোয়া পাঠের পর যদি তাদের দুজনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা সন্তান হয়, তাকে শয়তান কখনও ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি ৪৭৮৭)
দাম্পত্যজীবন মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর সূচনাপর্ব হলো বিয়ে। বিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে পারিবারিক ও সামাজিক ইবাদত। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা বিবাহযোগ্যদের বিবাহ সম্পন্ন কর, তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছলতা দান করবেন, আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা: নুর ৩২)।
রসুল সা. সামর্থ্যবানদের বিয়ের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করিম সা. ইরশাদ করেছেন, ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে তাদের বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা, বিয়ে দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা রাখে, কেননা রোজা তার ঢালস্বরূপ।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিয়ের রাতের আমল
হক্কানি উলামায়ে কেরাম বিয়ের রাতে কিছু আমলের কথা বলেন। স্বামী-স্ত্রী একত্রে দুই রাকাত নামাজ আদায় করাকে তারা মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য করেছেন, ইবনে আবি শাইবা শাকিক থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর কাছে এক লোক এসে বলল, আমি এক যুবতি মেয়েকে বিয়ে করেছি। আমি আশঙ্কা করছি সে আমাকে অপছন্দ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বললেন, মিল-মহব্বত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। দূরত্ব ও ঘৃণা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শয়তান সেটাকে তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় করে তুলতে চায়। যখন সে তোমার কাছে আসবে তখন তাকে তোমার পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার নির্দেশ দেবে। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা ১৭১৫৬)
বাসর রাতের দোয়াসমূহ
স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে দোয়া করা। হজরত আমর বিন শুয়াইব থেকে তিনি তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। নবী করিম সা. বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ে করে তখন সে যেন স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগ ধরে বাসর রাতে এ দোয়া পড়ে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরিহা ওয়া খাইরিমা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়া আউজুবিকা মিন সাররিহা ওয়া সাররিমা জাবালতাহা আলাইহি। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তার কল্যাণটুকু ও যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন সেটা প্রার্থনা করি। আর তার অনিষ্ট থেকে ও যে অনিষ্টের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাই)। (সুনানে আবু দাউদ ২১৬০)
নবদম্পতির জন্য দোয়া
নতুন বিয়ে হলে তার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হবে নবীজির শেখানো দোয়া পাঠ করে দোয়া করা। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহিত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন: بَارَكَ اللهُ لَكَ وَ بَارَكَ عَلَيْكَ وَ جَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ উচ্চারণ: ‘বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বাইনা কুমা ফি খাইরিন’ (তিরমিজি) অর্থ: আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, তোমাদের উভয়ের প্রতি বরকত নাজিল করুন। তোমাদের কল্যাণের সঙ্গে একত্রে রাখুন।’
যে বিয়ে বরকতময়
সুন্নত তরিকায় বিবাহ সম্পাদন করা হলে সে বিয়ে বরকতময় হয়। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘নিশ্চয় সে বিয়ে বেশি বরকতপূর্ণ হয়, যে বিয়েতে খরচ কম হয়। (মুসনাদে আহমাদ ও মুস্তাদরাকে হাকিম)। এ ছাড়া বিয়ের সংশ্লিষ্ট আরও কিছু সুন্নত রয়েছে। বিবাহ সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হওয়া, অপচয়, অপব্যয় ও বিজাতীয় অপসংস্কৃতিমুক্ত হওয়া, যৌতুকের শর্ত না থাকা। সামর্থ্যের বেশি দেনমোহর ধার্য বা শর্ত না করা। (তাবারানি আওসাত ৩৬১২, আবু দাউদ ২১০৬)
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম