বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আরেক নাম ভ্যালেন্টাইন ডে। কেন ভালোবাসার আরেক নাম ভ্যালেন্টাইন হলো জানেন?
সারাবিশ্বে ভালোবাসা দিবসটি যে মানুষটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তার নাম সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। কথিত রয়েছে, তৃতীয় শতকে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের শাসনকালে তিনি রোমের যাজক হিসেবে কাজ করতেন।
তার নামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বিশ্বে ভালোবাসা দিবস প্রচলন শুরু হয়। এই দিনটি আমরা সুখ, আনন্দ আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করলেও আজকের এ দিনটি মোটেও সুখের নয়। অতীতে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এ দিনটির স্মৃতির পেছনে লুকিয়ে আছে এক করুণ প্রেমের ইতিহাস।
‘প্রেমের সারথি’ হিসেবে পরিচিতি পান রোমের যাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। ছবি: সংগৃহীত
১৪ ফেব্রুয়ারির আজকের এই দিনটিতেই ‘ভালোবাসার দূত’ হিসেবে খ্যাত সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন সেই সময়ের রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তার মৃত্যুর আসল কারণ আজও সবার কাছে রহস্য হয়েই আছে।
ইতিহাস বলে, মধ্যযুগে রোম থেকে ইংল্যান্ডে ভ্যালেন্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সেও তিনি হয়ে ওঠেন সবচেয়ে জনপ্রিয় সেইন্টদের একজন।
জনশ্রুতি রয়েছে, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন সহানুভূতিসম্পন্ন, বীর ও রোমান্টিক মানুষ। অন্যদিকে রোমান সম্রাট ছিলেন তার ঠিক উল্টো। সেই সম্রাট রাজ্য শাসনের সময় অনুধাবন করলেন যে, বিবাহিত সৈন্যদের চেয়ে অবিবাহিত সৈন্যরা বেশি কর্মঠ। তাই হঠাৎ একদিন তিনি ঘোষণা দিলেন, তরুণরা বিয়ে করতে পারবে না। যুক্তি হিসেবে তিনি তুলে ধরেন, বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিত পুরুষরা সেনা হিসেবে বেশি সক্ষম।
ক্লডিয়াসের এই ঘোষণা মেনে নেননি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি গোপনে তরুণ যুগলদের বিয়ে দিতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে রোমান কারাগার থেকে খ্রিষ্টান বন্দিদের পালাতেও সাহায্য করেন। ক্লডিয়াসের কানে এ খবর পৌঁছে গেলে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন তিনি। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টের জন্মের ২৭০ বছর পর মৃত্যু হয় ভালোবাসার বার্তাবাহী এই সেইন্টের।
অন্য এক শ্রুতি অনুসারে, মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আগে ভ্যালেন্টাইনকে কারাদণ্ড দেন ক্লডিয়াস। সেখানে তার পরিচয় হয় এক কারারক্ষীর মেয়ের সঙ্গে। যে মেয়েটি ছিল অন্ধ। তার প্রেমে পড়েন সেইন্ট।
মৃত্যুদণ্ডের দিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) মেয়েটিকে একটি চিঠি লেখেন তিনি। চিঠির শেষে স্বাক্ষরের জায়গায় তিনি লিখেছিলেন, ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখে। তার অন্ধ দুই চোখে তখন ঝলমলে আলো। এর ফলে, ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন ডে ঘোষণা করেন। সেই থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করছে সারা বিশ্বের মানুষ।
বর্তমানে যে ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্যাপিত হয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খ্রিষ্টান ধর্ম ও প্রাচীন রোমের ঐতিহ্য। ‘প্রেমের সারথি’ ভ্যালেন্টাইনের ওই দিনের শোকগাথাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আজকের এই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’।