যুক্তরাজ্যের সেরা শহর নির্বাচিত টাওয়ার হ্যামলেটস
টাওয়ার হ্যামলেটস ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যের অন্যতম সেরা শহর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম *দ্য টাইমস* তাদের বার্ষিক তালিকায় এই শহরকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই তালিকা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত হচ্ছে। এ বছর বিশেষজ্ঞ প্যানেল নয়, পরিসংখ্যানই মূল বিচারকের ভূমিকা পালন করেছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অপরাধের হার এবং সামাজিক সম্প্রীতির মতো নয়টি বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে *দ্য টাইমস* যুক্তরাজ্যের প্রতিটি স্থানীয় প্রশাসনকে র্যাঙ্কিং দিয়েছে। প্রতিটি বিভাগ সমান গুরুত্ব পেয়েছে এবং সর্বনিম্ন স্কোরকেই সেরা ধরা হয়েছে। এই মানদণ্ডে টাওয়ার হ্যামলেটস ৩৩তম স্থানে উঠে এসেছে, যা পূর্ব লন্ডনের যেকোনো শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ।শিক্ষাক্ষেত্রে শহরটি বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছে। এখানে *অফস্টেড*-এর ‘অসাধারণ’ রেটিংপ্রাপ্ত স্কুলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এই কারণে শহরটি শিক্ষা বিভাগে মাত্র ৫ পয়েন্ট স্কোর করেছে, যা রিচমন্ড, চেল্টেনহ্যাম এবং স্ট্রাউডের মতো শহরকে ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়া, টাওয়ার হ্যামলেটস কমিউনিটি স্বার্থ সংস্থার সংখ্যার জন্যও ভালো রেটিং পেয়েছে। প্রতি ১০ হাজার জনে নিবন্ধিত কমিউনিটি স্বার্থ সংস্থার নিরিখে শহরটি ১৪ স্কোর করেছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতেও টাওয়ার হ্যামলেটসের পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্য। *NHS* টার্গেট পূরণ এবং অপেক্ষার সময়ের মানদণ্ডে শহরটি যথাক্রমে ৪৮ ও ৩৯ স্কোর করেছে। যদিও জিপি-সেবা এবং অপরাধের ক্ষেত্রে শহরটি তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে ছিল। অপরাধের জন্য শহরটি ২২৬ স্কোর পেয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসনের জন্য উন্নতির সুযোগ তৈরি করেছে।
পরিবেশ এবং ঐতিহ্যের মানদণ্ডে টাওয়ার হ্যামলেটসের অবস্থান মোটামুটি ভালো। গ্রিন ফ্ল্যাগ পুরস্কারপ্রাপ্ত পার্কের সংখ্যার ভিত্তিতে শহরটি ৫২ স্কোর করেছে। আর তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক ভবনের নিরিখে এর স্কোর ছিল ১৭৯।
টাওয়ার হ্যামলেটসের এই সাফল্য পূর্ব লন্ডনের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার অগ্রগতি এবং কমিউনিটি উন্নয়নের মাধ্যমে এটি বসবাসের জন্য একটি আধুনিক, সুষ্ঠু, এবং সৃজনশীল স্থান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাঙালি অধ্যুষিত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লুৎফুর রহমান।
তিনি লেবার পার্টির জন বিগসকে প্রায় সাত হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান।
যুক্তরাজ্য ও ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের ৩২টি বারোর একটি। এটি ঐতিহাসিক সিটি অভ লন্ডনের ঠিক পূর্বপাশে টেমস নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। এখানে লন্ডনের ডকল্যাণ্ডস অঞ্চলটি অবস্থিত, যার মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিয়া ডক্স এবং ক্যানারি হোয়ার্ফ পড়েছে। বারোটির দক্ষিণাংশের আইল অফ ডগ্জ্-এ লন্ডনের সবচেয়ে উঁচু ভবনগুলির মধ্যে অনেকগুলি অবস্থিত। লন্ডনের যে ৫টি বারোতে ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে, তাদের মধ্যে টাওয়ার হ্যামলেট্স একটি।
যুক্তরাজ্যের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই বারোতে প্রায় ১,৯৬,১০৬ জন লোকের বাস। ব্রিটেনের বারোগুলির মধ্যে যেগুলিতে সবচেয়ে কমসংখ্যক খাঁটি ব্রিটিশ অধিবাসী বাস করে, তাদের মধ্যে টাওয়ার হ্যামলেট্স অন্যতম। এখানকার প্রায় ৪৩% লোক শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ, এবং প্রায় ৩৩% লোক বাংলাদেশ থেকে আগত অভিবাসী বা বাংলাদেশী ব্রিটিশ নাগরিক। প্রায় ৭% লোক কৃষ্ণাঙ্গ, মূলত সোমালীয়।
আদমশুমারি অনুযায়ী এখানে ৬৫,৫৫৩ জন বাংলাদেশীর বাস। এদের মধ্যে যৌথ পরিবারে থাকার প্রবণতা বেশি। ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশীর সংখ্যাও লন্ডনের গড়ের প্রায় দ্বিগুণ (এখানকার প্রায় ৪৯% বাংলাদেশীর বয়স ১৯ বা তার নিচে)। বেশির ভাগ বাংলাদেশী ছেলেমেয়ে যুক্তরাজ্যে এবং বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশী বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে।