রমজানে প্রতি মুহূর্তেই রহমত বর্ষিত হতে থাকে। সবচেয়ে বেশি রহমত থাকে রমজানের শেষ দশ দিনে। মহান আল্লাহ কিছু সময়কে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। সেই সময়গুলোর একটি পবিত্র
রমজান মাসের শেষ ১০ দিন।
রমজানের বাকি দিনগুলোর চেয়ে এই ১০ দিনের ফজিলত অনেক বেশি। এই দশকের রাতগুলো যেমন শ্রেষ্ঠ, তেমনি দিনগুলোও ফজিলতে পূর্ণ। এই সময়ে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ইবাদতে নিবিড়ভাবে মগ্ন থাকতেন। রমজানের শেষ দশকে নবীজির আমলগুলো এখানে তুলে ধরছি:
ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া
পবিত্র রমজানে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতের মাত্রা খুব বেশি বাড়িয়ে দিতেন। শেষ দশক এলে এর মাত্রা আরো বেড়ে যেত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা এতো বেশি বাড়িয়ে দিতেন, যেমনটি অন্য সময় করতেন না। (আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৮৩৫১; মুসলিম, হাদিস : ১১৭৫)
আরেক হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, শেষ দশকে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমর বেঁধে আমল করতেন। অর্থাৎ খুব গুরুত্বসহ আমলে লিপ্ত থাকতেন।
পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দেয়া
রমজানের শেষ দশকে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জেগে থাকতেন। শেষরাতে পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
তাহাজ্জুদের জন্য অন্যকে জাগানোর ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে তেমন জোর দেওয়া না হলেও পবিত্র রমজানের শেষ দশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তখন তিনি পরিবার-পরিজনকে ইবাদতের জন্য শেষ রাতে জাগিয়ে তুলতেন।
ইতিকাফ
রমজানের শেষ দশকে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইবাদতটির প্রতি সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হতেন- তা হলো ইতিকাফ। মহান আল্লাহর ইবাদতের জন্য সব ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে এবং পবিত্র লাইলাতুল কদরের খোঁজ করার উদ্দেশ্যে এই দশকে তিনি মসজিদে অবস্থান করতেন। জীবদ্দশায় একাধিকবার তিনি ইতিকাফ করেছেন। নবীজির মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.)–এর বর্ণনায় এসেছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল অবধি প্রতি বছরই ইতিকাফ করেছেন। নবীজির ইন্তেকালের পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। (বুখারি: ২০২৬; সহিহ্ মুসলিম: ১১৭২)
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা
কোরআন নাজিলের মাস রমজানের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় শবে কদরের কারণে। এ রাতেই মহান আল্লাহ জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কোরআন নাজিল করেছেন।
হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে কদর তালাশ করতে বলেছেন। এ হিসেবে রমজানের শেষ দশদিনের যেকোনো বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করা যায়, অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজান দিবাগত রাতগুলো। রমজানের শেষ দশকের পাঁচটি রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করতে হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنْ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করো।’ (বুখারি, হাদিস: ২০১৭; মুসলিম, হাদিস: ১১৬৯)
বেশি বেশি দোয়া করা
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বলো,
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي
হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩) (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)
সদকাতুল ফিতর আদায় করা শেষ দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সদকাতুল ফিতর আদায় করা। কেননা রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সাহাবায়ে কেরাম ঈদের নামাজের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। (বুখারি, হাদিস: ১৫০৩)