বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেত্রী উমামা ফাতেমা রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক লাইভে অংশ নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন। দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিটের ওই লাইভে তিনি জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃতভাবে বক্তব্য রাখেন। আবেগঘন মুহূর্তে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “জুলাই কেন মানি মেকিং মেশিন হবে?”
সম্প্রতি গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদসহ আরও চারজন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় সংগঠনটির কার্যক্রম নিয়ে।
এমন প্রেক্ষাপটে উমামা ফাতেমার ফেসবুক পোস্ট ও লাইভ আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করে বিতর্কে। লাইভে তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় আমরা স্লোগান দিতাম, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। কখনো ভাবিনি শিশুসহ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে জীবন দেবে। আমরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আর সেই স্বপ্নের শক্তিতেই টিকে ছিলাম।”
তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর তিনি সংগঠন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। “আমি নিজেই বলেছিলাম প্ল্যাটফর্মটা বন্ধ করে দিতে। সম্ভবত সে কারণেই আমাকে আর ডাকা হতো না,”— বলেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের সময় সমন্বয়কদের ভূমিকা নিয়ে উমামা বলেন, “৫২, ৬২ বা ১৫৮ জন সমন্বয়ক থাকলেও বাস্তবে সেভাবে কার্যকর ভূমিকা ছিল না। বরং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই ছিল মূল শক্তি।”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সমন্বয়কদের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, “সমন্বয়কদের অনেকেই তখন ভিন্ন পথে গেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের দরকার কি? ছাত্রদের গণ্ডি পেরিয়ে এটি একটি বৃহৎ জনগণের আন্দোলন হওয়া উচিত।”
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আর্থিক স্বার্থ হাসিলের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “আমি মুখপাত্র হওয়ার পর দেখেছি, আন্দোলনের নামে কেউ কেউ টেন্ডার, তদবির, ডিসি নিয়োগ—এসব বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি কখনো ভাবিনি জুলাই আন্দোলন দিয়ে কেউ টাকা উপার্জনের পথ খুঁজবে।”
নিজেকে নিয়ে ওঠা নানা প্রশ্নের জবাবে উমামা বলেন, “অনেকে বলে আমি হাজার কোটি টাকা কামিয়েছি! আমি বলি, আমার একটি ভালো জীবন আছে, ভালো পরিবার আছে, স্কলারশিপের প্রয়োজন নেই। পরিবার চায় আমি দেশের জন্য কিছু করি। আমার অবস্থান তারই প্রতিফলন।”
উমামার এ আবেগঘন বক্তব্য দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার বক্তব্যে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন, আদর্শ ও বাস্তবতার সংঘাত এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।