সিরিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ ১৪ বছর পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। শনিবার (৫ জুলাই) সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক সফরের সময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন। খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সিরিয়ার জনগণের জন্য নতুন আশার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠনে নতুন সরকার যে অঙ্গীকার করেছে, তাতে ব্রিটেনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।”
সফরকালে ল্যামি সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শিবানি ও অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করেন। এটি গত ১৪ বছরের মধ্যে সিরিয়ায় কোনো ব্রিটিশ মন্ত্রীর প্রথম সফর।
ব্রিটেন সিরিয়ার জন্য ১২ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার (৯৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড) আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এ সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে জরুরি মানবিক সহায়তা ছাড়াও শিক্ষা ও অবকাঠামোসহ দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনে সহায়তা করা হবে।
সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। প্রায় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। যদিও এই গোষ্ঠীর অতীতে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল, তারা বর্তমানে সেই সম্পর্কের ইতি টেনেছে বলে দাবি করছে। তবে অনেক বিশ্লেষক এখনো বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়ার নতুন সরকারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, যা দেশটিকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় পুনরায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ করে দেবে বলে মত দিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা।
এর আগেই, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্রিটেন সিরিয়ার ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। বিনিয়োগ সহজ করতে সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ২৩টি আর্থিক ও তেল কোম্পানির ওপর থেকে সম্পদ জব্দাদেশ প্রত্যাহার করা হয়, যদিও সাবেক সরকারের ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়।
ডেভিড ল্যামি বলেন, “একটি স্থিতিশীল সিরিয়া অনিয়মিত অভিবাসনের প্রবাহ কমাবে, রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসে সহায়ক হবে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক রূপান্তরের পক্ষে এবং সেই প্রচেষ্টায় সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
দামেস্ক সফর শেষে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি কুয়েতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ছাড়াও সুদানের চলমান মানবিক সংকট মোকাবেলায় কুয়েতের সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্বের ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে।