সারাদেশের ন্যায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। সিলেটে পরীক্ষা কেন্দ্র এলাকায় থাকবে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। তবে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের ২০২৫ সালে বা বছর বছর পরীক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়লেও কমেছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। শিক্ষার্থী কমার কারণ হিসেবে সিলেট জেলার লোকজন বিদেশমুখী, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি সমতল ভৌগলিক অবস্থানের কারনে বিশেষ করে চা বাগান এলাকা, সুনামগঞ্জে হাওর অঞ্চল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠি হওয়ায় ফসল উৎপাদনের কাজে জন্য অনেক দরিদ্র পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়া অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞজনেরা। এছাড়াও আগের শিক্ষা কারিকুলামের কারণে শিক্ষার্থিরা ঝরে পড়েছে বেশি।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিভাগের ২০২৪ সালের পরীক্ষায় ৯৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ১৫২টি। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৫৫৪ জন। অপর দিকে ২০২৫ সালের পরীক্ষায় ৯৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ১৫৪টি। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৮৭২ জন। এবছর শিক্ষার্থী সংখ্য কমেছে ৬ হাজার ৬৮২ জন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা কমেছিল ৮৪৮ জন। একইভাবে ২০২৩ সালে সিলেট বিভাগে পরীক্ষার ৩টি কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছিল ৪টি।
যা ২০২৪ সালের পরীক্ষায় ছাত্রসংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজার ৫৫৪ জনের মধ্যে ছাত্র ৪৫ হাজার ১১১ জন এবং ছাত্রী ৬৪ হাজার ৪৪৩ জন। এবার ১ লাখ ২ হাজার ৮৭২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রসংখ্যা ৪২ হাজার ৫৩ জন এবং ছাত্রী ৬০ হাজার ৮১৯ জন। এতে দেখা যায় ছাত্র কমেছে ৩ হাজার ৫৮ জন। ছাত্রী কমেছে ৩ হাজার ৬২৪ জন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট আঞ্চলিক উপপরিচালকের কার্যালয়ের আঞ্চলিক উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ.কে.এম আবদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থী কমার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ করে সিলেট জেলার লোকজন বিদেশ মুখি, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি সমতল ভৌগলিক অবস্থানের কারনে বিশেষ করে চা বাগান এলাকা, সুনামগঞ্জে হাওর অঞ্চল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠি হওয়ায় ফসল উৎপাদনের কাজে জন্য অনেক দরিদ্র পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়া অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞ জনেরা। এছাড়াও আগের শিক্ষা কারিকুলামের কারণে শিক্ষার্থিরা ঝরে পড়েছে বেশি। আশা করি নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়বে।
এদিকে সিলেটে যেসব জায়গায় পরীক্ষা কেন্দ্র এলাকায় থাকবে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১০ এপ্রিল। এসএসসি পরীক্ষার লিখিত বা তত্ত্বীয় অংশ শেষ হবে ১৩ মে। আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১৫ মে। এরপর ২২ মে পর্যন্ত চলবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে নানা পদক্ষেপ সিলেট শিক্ষা বোর্ড। পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে হলে প্রবেশ করা সহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হল পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। তাই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তির পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে অযথা ঘোরাফেরা করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পরে কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ বা পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা যাবে না।
কেন্দ্র সচিব ব্যতীত পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীগণের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১০ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে ১৩ মে, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত সবধরণের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীগণ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের সময় কোন ইলেট্রনিক্স ডিভাইস বা মোবাইল, মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যবহারের অনুমতিবিহীন যে কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের নিকট উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিরুমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন। কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে ফটোকপি মেশিন পরীক্ষা চলাকালীন বন্ধ থাকবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে বহিরাগত/ অবাঞ্চিত লোকের সমাগম ঘটলে অথবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় প্রশাসন এবং শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোন মাধ্যমের গুজব থেকে বিরত থাকুন।
ট্রেজারি/ থানা/নিরাপত্তা হেফাজত হতে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীগণ কোন ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাঁচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোন যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।