বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠান মেটা (যারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ পরিচালনা করে) এখন ব্যবহারকারীদের ব্যাপক ক্ষোভের মুখে। কারণ, সম্প্রতি লাখো মানুষের অ্যাকাউন্ট হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে—কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই।
ব্যবহারকারীরা বলছেন, তারা জানতেই পারছেন না কেন তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, এটি কোনো মানবিক ভুল নয় বরং এআই (Artificial Intelligence)–নির্ভর স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রামের ত্রুটির ফল।
অনেকে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সংযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকি যারা ফেসবুক গ্রুপ, পেজ বা মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থা করতেন, তারাও বিপদে পড়েছেন।
বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা
কানাডার ব্রিটানি ওয়াটসন, ৩২ বছর বয়সী এক নারী, নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ৯ দিন বন্ধ থাকার পর বুঝতে পারেন, তিনি একা নন—হাজার হাজার মানুষের সাথেই একই ঘটনা ঘটছে। তিনি একটি অনলাইন পিটিশন চালু করেন, যেখানে কয়েক সপ্তাহেই ২৫,০০০+ স্বাক্ষর জমা পড়ে।
ব্রিটানি বলেন,
“ফেসবুক শুধু একটা অ্যাপ না—এটা ছিল আমার স্মৃতির ভাণ্ডার, পরিবার, বন্ধুরা, মানসিক সাপোর্ট সিস্টেম—সবকিছু।”
মিশেল ডেমেলো, আরেক কানাডীয়, তার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়ে।
“লোকজন ভাবছিল আমি তাদের ব্লক করে দিয়েছি! কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না।”
BBC মেটার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরদিন মিশেলের অ্যাকাউন্ট ফেরত দেওয়া হয়। তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন:
“এত বড় কোম্পানি, কিন্তু একটা মানুষকেও ফোনে বা মেসেজে পাওয়া যায় না—এটা অপমানজনক।”
ইংল্যান্ডের সাম টল, ২১ বছর বয়সী এক তরুণ, বলেন তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার পর তিনি আপিল করেছিলেন, কিন্তু মাত্র দুই মিনিটেই তা বাতিল হয়ে যায়।
“এটা স্পষ্ট, কোনো মানুষ নয়—একটি রোবট বা এআই এটা করেছে।”
মেটার অবস্থান ও ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া
মেটা দাবি করেছে, তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন ভাঙা হলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয় এবং ব্যবহারকারীরা আপিল করতে পারে। তবে অভিযোগ রয়েছে, আপিল করলেও মানুষের বদলে এআই বা স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম সেটা দেখে, এবং অনেক সময় কোনো উত্তরই দেওয়া হয় না।
এখন অনেকেই বলছেন, এই ইস্যু ছোট নয়—বরং বৈশ্বিকভাবে বড় একটি সমস্যা। তাই প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিবাদ, যেন মেটা বুঝতে পারে এর প্রভাব কত গভীর।
প্রযুক্তি বনাম মানবিক সংযোগ
এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়—প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক, মানুষের আবেগ, স্মৃতি ও সম্পর্ক কোনো কম্পিউটার দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, অনেকের জীবনের দৈনন্দিন সংযোগের সেতু। হঠাৎ সেই সেতু ভেঙে পড়লে, মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়ে—সেই বাস্তবতাও হয়তো এখন মেটার বোঝার সময় এসেছে।