চ্যানেল পেরিয়ে অনিয়মিতভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। একইসঙ্গে, ফ্রান্স থেকেও কিছু অভিবাসীকে গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাদের যুক্তরাজ্যে থাকার বৈধ অধিকার রয়েছে, বিশেষ করে যাদের পরিবারের সদস্য ইতোমধ্যে ব্রিটেনে বসবাস করছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, উভয় দেশের কর্মকর্তারা একটি পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্প নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্পের আওতায় অল্প সংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসীকে চ্যানেল পার হওয়ার পর ফেরত পাঠানো হবে।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি, যেন এই বিপজ্জনক অভিবাসন রুট বন্ধ করা যায় এবং মানবপাচারকারী চক্রগুলোর কার্যক্রম ভেঙে দেওয়া যায়।”
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ছোট নৌকায় করে ৮,৮৮৮ জন অভিবাসী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) একদিনেই ৭০৫ জন লোক ১২টি নৌকায় করে চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে আসে। যদিও এটি এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যা নয়, তবুও বিষয়টি নিয়ে সরকার চাপে রয়েছে।
ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি চায়, এই ইস্যুতে কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে। দলটির নেতা কেয়ার স্টারমার পূর্বে জানিয়েছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে একটি রিটার্ন চুক্তি করার চেষ্টা করবেন, তবে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
পরিবহনমন্ত্রী লিলিয়ান গ্রিনউড স্কাই নিউজকে বলেন, “ফরাসি সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটি কোনো স্বল্পমেয়াদি সমস্যা নয়। যারা মানুষ পাচার করে এবং তাদের জীবনের ঝুঁকি নেয়, তাদের মোকাবেলায় কঠোর পরিশ্রম দরকার।”
ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে “লে টোকেট চুক্তি” নামে একটি সীমান্ত নিরাপত্তা চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে। এর আওতায় যুক্তরাজ্য ফ্রান্সকে ২০২৩ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে চ্যানেল উপকূলে নজরদারি বাড়ানোর জন্য অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।
এছাড়া, ফরাসি উপকূলে নতুন এলিট অফিসার মোতায়েন, গোয়েন্দা ইউনিট স্থাপন, পুলিশ সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অগভীর জলে অভিযান চালানোর সক্ষমতা বাড়ানো—এসব বিষয়েও দুই দেশ একমত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান ফ্রান্সের সঙ্গে একটি রিটার্ন চুক্তি করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে তা সফল হয়নি।
সরকার আশা করছে, ফ্রান্সের সঙ্গে চলমান এই নতুন আলোচনা সফল হলে, অনিয়মিত অভিবাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে এবং মানবপাচার রোধে একটি যৌথ পদক্ষেপ গঠন করা যাবে।