Uk Bangla Live News | Stay updated with UK Bangla Live News

লাইলাতুল কদর: মহিমান্বিত রাত

ডেস্ক সংবাদ

লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত এক পবিত্র রজনী। মাহে রমজানের সীমাহীন ফজিলত এবং বরকত লাইলাতুল কদরের কারণেই।
আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘রমজান হলো সে মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। ’ (সুরা বাকারা, ১৮৫ আয়াত) পবিত্র কুরআন সর্ব প্রথম কদরে নাজিল হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পবিত্র কুরআনের সুরা কদরের প্রথম আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে। ’ যে রাতের কারণে মাহে রমজান বছরের অন্যান্য ১১টি মাস অপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত হয়ে গেল, সেই কদরের রাতের মর্যাদা যে অসীম হবে সেটাই স্বাভাবিক।
কদরের রাতের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ সুরাতুল কদরে বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর’ অর্থাৎ কদরের রাতের মর্যাদা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ এক কদরের রাতে ইবাদাত করলে এক হাজার মাস একটানা ইবাদাত করলে যে সওয়াব হয় তার থেকেও বেশি সওয়াব হাসিল হবে। বস্তুত কদরের রাতটি উম্মতে মোহাম্মদির জন্য মহান আল্লাহর একটি বিশেষ উপহার। ইবনে জারির বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা) বনি ইসরাইলের এক সাধক পুরুষের বিষয়ে সাহাবাদের মজলিশে আলোচনা করেছিলেন। তিনি সারা রাত জেগে আল্লাহর ইবাদাত করতেন। আর সকাল হতেই আল্লাহর দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বেরিয়ে পড়তেন এবং সারা দিন জেহাদে কাটাতেন। এভাবে তিনি দীর্ঘ এক হাজার মাস কাটিয়ে দেন। ঘটনার বিবরণ শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) খুবই আশ্চর্য হয়ে পড়েন। এ সময়ে আল্লাহ তায়ালা সুরা কদর নাজিল করে জানিয়ে দেন, বনি ইসরাইলের ওই আবেদের এক হাজার মাসের ইবাদাতের চেয়ে উম্মতে মোহাম্মদির এক রাতের ইবাদতের মর্যাদা বেশি।
লাইলাতুল কদর আরবি শব্দ। লাইলাতুল অর্থ রাত আর কদর অর্থ মর্যাদা, সম্মান, মাহাত্ম্য, ভাগ্য নির্ধারণ ইত্যাদি। তাহলে লাইলাতুল কদরের অর্থ মহিমান্বিত রাত, মর্যাদাপূর্ণ রাত, মহৎ রাত, ভাগ্য নির্ধারণের রাত। ইমাম আজ জাহরি (র.) বলেছেন, এ রাতের নিজস্ব মাহাত্ম্যের কারণেই এ নামকরণ করা হয়েছে।
এ রাত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এ বরকতময় রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। ’ (সুরা দুখান, ৪ আয়াত) আর এ কারণেই লাইলাতুল কদরকে অনেকে ভাগ্য রজনী বলে জানেন। কিন্তু সহীহ হাদিসের বিবরণ থেকে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির বহু আগেই সমস্ত মাখলুকের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকুলের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। ’
কদরের রাতে ভাগ্য লিখন সম্পর্কে তাফসিরে কাসিরে উল্লিখিত হজরত ইবনে আব্বাসের (রা.) হাদিসটি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আসমান-জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টিকুলের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষণ করেছেন। প্রতি বছর কদরের রাতে আগামী এক বছরের বৃষ্টি, হায়াত, মউত, রিজিকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি লাওহে মাহফুজ থেকে নকল করে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয়। আর সেজন্যই এ রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়।
শবে কদরের মাহাত্ম্যের কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) মাহে রমজানের শেষ দশ দিন ইবাদত-বন্দেগিতে এত বেশি তৎপর হয়ে পড়তেন যে, অন্য সময়ে অতটা দেখা যেত না। হজরত আয়েশার (রা.) ভাষায়, রাসুলুল্লাহ কোমর বেঁধে নিতেন। তিনি বর্ণনা করেছেন, যখন রমজান মাসের শেষের দশ দিন এসে যেত, রাসুলুল্লাহ (সা.) পরনের কাপড় শক্ত করে বেঁধে নিতেন, তিনি নিজে রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের লোকদেরও জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি-মুসলিম)
কদরের রাত নির্দিষ্টভাবে কোন রাত, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ বিষয়ে যথেষ্ট মতানৈক্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ ইসলামী মনীষা একমত যে, লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে হতে পারে আর এ সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (বুখারি-মুসলিম)
রাসুলুল্লাহকে নির্দিষ্টভাবেই লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে কদরের রাত দেখানো হয়েছে, কিন্তু আমাকে সেটা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা তা রমজানের শেষ দশ দিনে খোঁজ করো। তোমরা প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা অনুসন্ধান করো। ’ (বুখারি-মুসলিম) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর ভুলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে। ’ (বুখারি)
বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের অভিমত, কদরের রাতকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে মানুষ এই একটি রাতের ইবাদতকে যথেষ্ট মনে করে ইবাদত-বন্দেগি ছেড়ে দিত। সে কারণেই আল্লাহ তায়ালা রাসুলে কারিমকে (সা.) কদরের রাত দেখানোর পরও ভুলিয়ে দিয়েছেন, যাতে মানুষ বিরতিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে। আলিমগণের অভিমত হলো, লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতেই হয়। তবে প্রতি রমজানে একই রাতে হয় না। বরং ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯– মাহে রমজানের এ দিনগুলির মধ্যে কদরের রাত আবর্তিত হয়। অর্থাৎ একেক রমজানে একেক দিনে লাইলাতুল কদর হয়।

 

Print
Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ সংবাদ

1746522904.sylhet
সিলেটে আইনজীবী শাসমুল হত্যায় ছেলেসহ ৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড
সিলেটে আইনজীবী শাসমুল হত্যায় ছেলেসহ ৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড
1746519365.Gov
ঈদুল আজহায় টানা ১০ দিনের ছুটি, ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকারের
ঈদুল আজহায় টানা ১০ দিনের ছুটি, ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকারের
83bd49285d2a7eea6474adf0a0501561ec1da020f2961350
মারা গেলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ডিফেন্ডার লুইস গালভান
মারা গেলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ডিফেন্ডার লুইস গালভান
accident-inner20180710061154
এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৮৩, মোট দুর্ঘটনা ৬১০
এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৮৩, মোট দুর্ঘটনা ৬১০
image_185294_1746516981
লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া, ফিরোজায় পৌঁছেছেন দুপুরে
লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া, ফিরোজায় পৌঁছেছেন দুপুরে
388265
সীমান্তে টিকটক ভিডিও তৈরির ঘটনায় ৮ ঘণ্টা পর মামা-ভাগনেকে ফেরত দিল বিএসএফ
সীমান্তে টিকটক ভিডিও তৈরির ঘটনায় ৮ ঘণ্টা পর মামা-ভাগনেকে ফেরত দিল বিএসএফ

সম্পর্কিত খবর