যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কমিটি জানিয়েছে, ইরান এখন রাশিয়ার মতোই বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। ইরান শুধু সাইবার হামলাই করছে না, বরং যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ইরানি ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা ও শারীরিক আক্রমণেরও চেষ্টা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য এখন ইরানের গুপ্তচরবৃত্তির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পর যুক্তরাজ্যে সাইবার আক্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সক্রিয়।
কমিটির মতে, ইরানের সাইবার হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে, আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে বা লাভের জন্য এসব কাজ করছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও আর্থিক খাত এসব হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
কমিটি আরও বলেছে, ইরান সরকারের সমালোচনায় যুক্তরাজ্যে কাজ করা ইরানিদের প্রতি হুমকি ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে দ্রুত বেড়েছে। অনেকেই তখন ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ কাভার করছিলেন।
প্রতিবেদনটি ইসরায়েল ও হামাসের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ বা ইরানি স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত নয়, কারণ এসব ঘটনার পরে এটি প্রস্তুত হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ইরানি রাষ্ট্র, তার গোয়েন্দা সংস্থা, ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড এবং সংশ্লিষ্টরা যদি যুক্তরাজ্যে কোনো কাজ করতে চায়, তাহলে এখন থেকে তাদের তা নিবন্ধন করতে হবে। না করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
কমিটি সরকারকে সমালোচনা করে বলেছে, তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না করে শুধু সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান খুঁজে বেড়াচ্ছে। সরকারের মধ্যে ইরান বিষয়ে দক্ষ লোকজনেরও অভাব রয়েছে।
এছাড়া, ইরানকে একটি বাস্তববাদী দেশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যারা মূলত নিজেদের শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতেই আগ্রহী। তারা সরাসরি যুদ্ধে না গিয়েও মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে এবং জোটবদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে চাইছে।
MI5 জানিয়েছে, ২০২২ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত ২০টি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা হয়েছে, যা যুক্তরাজ্যে গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারত।
নিরাপত্তামন্ত্রী ড্যান জার্ভিস বলেন, “ইরানি সরকার ভিন্নমতাবলম্বী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে, যারা তাদের দমন-পীড়ন নিয়ে রিপোর্ট করে। এমনকি ইহুদি ও ইসরায়েলি নাগরিকদেরও বিশ্বজুড়ে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।”
কমিটির চেয়ারম্যান লর্ড বিমিশ বলেন, সরকারে ইরান বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষ লোক না থাকায় সঠিক নীতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।