সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আগুন লাগে বাজারে। দাম বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে। এতে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েন জনসাধারণ। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে সরকার উদ্যোগ নিয়ে গঠন করে টাস্কফোর্সের বিশেষ টিম। সারাদেশের বাজারে শুরু হয় টাস্কফোর্সের অভিযান। কিন্তু এখনো পর্যন্ত স্বস্তি ফিরেনি বাজারে।
বাজারের নিত্যপণ্যের দাম ক’দিন পরপর বাড়লেও বেতন কিংবা মজুরি না বাড়ায় আক্ষেপ করতে দেখা যায় চাকুরিজীবী বা শ্রমিকদের মাঝে। নগরীর লালবাজার এলাকায় সবজি কিনতে এসে ভ্যান চালক সুরুজ মিয়া বলেন, ‘সবতার দাম বাড়ে আমার দাম (ইনকাম) তো আর বাড়ের না’। তিনি নগরীর মহাজনপট্টি এলাকায় একটি রড সিমেন্টের দোকানে ভ্যান চালানোর কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আগে যে ট্যাখা রুজি খরতাম এখনো ঔ ট্যাখা রুজি খরি। ওইলে দিন দিন সবতার দাম বাড়ের, আমার দাম আর বাড়ের না।’
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে হাঁপিয়ে উঠছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনসাধারণ আশাবাদী ছিলেন বাজারের সকল পণ্যের দাম নাগালের ভিতরে আসবে। কিন্তু গত দুই মাসে মূল্যস্ফীতিতে কিছু কিছু পণ্যে নিম্নযাত্রা দেখা গেলেও অধিকাংশ পণ্যের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণে ভিতরে আসেনি।
মঙ্গলবার মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় সবজির দাম কিছুটা কমলেও নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের ভিতরে এখনো আসেনি। চাল-ডাল-তেল থেকে শুরু করে বাজারের অধিকাংশ পণ্যে দাম থাকার কারণে শ্রমজীবী মানুষের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিত্যপণ্যের দাম ক’দিন পরপর বাড়ে। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের মজুরি বাড়েনা। এতে সংসার চালাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা।
সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়-বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ শাক-সবজি রয়েছে। তবে দাম খুব একটা কমেনি। শিম, ফুলকপি, লাউ, ঝিঙা, টমেটো, কাঁচা মরিচ, মুলা, চিচিঙ্গা, শসা, ঢেড়স, কাঁকরোল, মুকি আলু, বাঁধাকপি, বেগুন, পেঁপে, গাজর, লাল শাক, পুঁই শাকে ভরপুর বাজার। এরমধ্যে টমেটো, শিম, গাজর এবং কাঁচা মরিচের দাম এখনো শতকের বাইরে।
বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ১৫০-১৮০ টাকা, লাউ সাইজ ভেদে ৪০-৮০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, গাজর ১৮০-২০০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০, ফুলকপি ৯০-১০০, বাঁধাকপি ৮০-৯০, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০-৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা, আদা ১৫০-১৬০ টাকা, রসুন ২১০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আম্বরখানা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা রতন মিয়া জানান, আড়ত এ সবজির দাম বেশি। বেশি দামে বিক্রিও করতে হয়। আড়ত থেকে সবজি কিনে আনার পর অনেক সবজি পচা কিংবা বিক্রির অনুপযোগী পাওয়া যায়। এজন্য এইগুলোর ক্ষতি পোষাতে গিয়ে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা মুনাফা ধরে বিক্রি করতে হয়। যদি আড়ত এ দাম কিছুটা কমে তাহলে বাজারে স্বস্তি ফিরবে।
সোবহানিঘাট সবজি বাজারের আড়তদার তাফাজ্জুল হক বলেন, এখন সবজির মৌসুম তাই সবজির দাম কমছে। এই মৌসুমে দাম প্রতিবছরই কম থাকে কিন্তু এবার কমতে সময় লাগছে। আরো কমবে। কেননা কৃষকরা সবজি উৎপাদন করে বাজারে তুলা শুরু করেছে। আমরা বেশি মুনাফা করি না। সীমিত মুনাফায় বিক্রি করি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এসসিসিআই) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস জানান, সরকার পরিবর্তনের ফলে বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছিল। সাথে সাথে আমরা চেম্বারের নেতৃবৃন্দ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। যাতে অতিরিক্ত দামে পণ্য না বিক্রি করা হয়।
বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে টাস্কফোর্সে বিশেষ টিম সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও অভিযান শুরু করে ১০ অক্টােবর থেকে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) শ্যামল পুরকায়স্থ বলেন, আমরা বাজারে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করেছি। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মোট ৭৬টি প্রতিষ্ঠানকে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয়, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্যে গরমিলসহ বিভিন্ন কারণে ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই অভিযানের ফলে বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।