এক আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রযুক্তির প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে বর্তমান প্রজন্ম। অভিভাবকদের ওপর নির্ভর না করে অনেক শিশু-কিশোর নিজেরাই সোশ্যাল মিডিয়া ও স্মার্টফোন ব্যবহারে সীমা টানছে।
বিশ্বের ১৮টি দেশে করা GWI-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে যারা ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার থেকে সচেতনভাবে বিরতি নেয়, তাদের হার ২০২২ সালের তুলনায় ১৮% বেড়ে এখন ৪০%-এ দাঁড়িয়েছে।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস (LSE)-এর গবেষক অধ্যাপক সোনিয়া লিভিংস্টোন বলেন, “শিশুরা বুঝতে পারছে অতিরিক্ত অনলাইন সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সোশ্যাল মিডিয়াকে পুরোপুরি বাদ না দিয়ে তারা নিজেরাই ব্যবহার সীমিত করার কৌশল রপ্ত করছে।”
অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাময়িক বিরতি নেয়, নেতিবাচক বিষয় এড়িয়ে চলে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোপুরি অ্যাপ মুছে ফেলে। এটি এক ধরনের আত্ম-নিয়ন্ত্রণমূলক বিদ্রোহ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘স্মার্টফোন-ফ্রি চাইল্ডহুড’ আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেইজি গ্রিনওয়েল বলেন, “তরুণরা এখন ‘অনলাইনে সবসময় উপস্থিত থাকা’-এর চিন্তাভাবনাকেই চ্যালেঞ্জ করছে। তারা বুঝতে পারছে এসব প্ল্যাটফর্ম মনোযোগ আটকে রাখার জন্য তৈরি।”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান
-
১৬–২৪ বছর বয়সীদের ৪৭% এখন নোটিফিকেশন বন্ধ রাখে বা “ডু নট ডিস্টার্ব” মোড চালু রাখে (২০২৩ সালে ছিল ৪০%)
-
৩৪% তরুণ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ইচ্ছাকৃত বিরতি নেয়
-
২৯% বেশি সময় নেওয়ার কারণে অ্যাপ মুছে ফেলে
-
২৪% সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে অ্যাপ ডিলিট করে
অফকমের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৮–১৭ বছর বয়সীদের এক-তৃতীয়াংশ মনে করে তারা খুব বেশি সময় অনলাইনে থাকে।
১৮–২৫ বছর বয়সীরা বলছে, তাদের পিতামাতারা তাদের খুব অল্প বয়সেই ফোন দিয়েছেন, এখন তারা নিজ সন্তানের ক্ষেত্রে সেই ভুল করতে চান না। প্রায় অর্ধেক তরুণই এমন এক পৃথিবীতে বাস করতে চায় যেখানে ইন্টারনেট নেই, এবং তারা ডিজিটাল কারফিউয়ের পক্ষে।
একই জরিপে দেখা গেছে, অভিভাবকদের অন্যতম বড় দুশ্চিন্তা এখন সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি—এটি জলবায়ু সংকট, যুদ্ধ এবং বাসস্থান সংকটের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গেও পাল্লা দিচ্ছে।
৮% অভিভাবক জানিয়েছেন, হিট নেটফ্লিক্স সিরিজ Adolescence দেখার পর তারা সন্তানদের স্ক্রিন টাইম আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন।