সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া এখন সহজতর হয়েছে। কিন্তু সেখানে সঠিক তথ্যের পাশাপাশি কিছু অসত্য ও বানোয়াট তথ্যও প্রচার করা হয়। তাই আমাদেরকে যাচাই করে সঠিক তথ্যটি গ্রহণ করতে হবে।তিনি বলেন, তথ্য জানা সকলের অধিকার। এটিকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। জনগণ যাতে তথ্য সেবা পেতে কোন রকম প্রতিবন্ধকতার মুখে না পড়ে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
শনিবার সকালে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেনের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক মো: সালাহ উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর কুমার পালের পরিচালনায় উক্ত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি সনাক সদস্য এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলজার আহমদ হেলাল, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মলয় বিশ্বাস,ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) এর দলনেতা ও ছাত্র প্রতিনিধি এম মাসুদ মোয়াজ্জম খান প্রমুখ।সভায় সনাক-সিলেট কর্তৃক পরিচালিত “সিলেট জেলার সরকারি অফিসসমূহের ওয়েব পোর্টাল পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন” উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সনাক সভাপতি সৈয়দা শিরীন আক্তার (অ্যাডভোকেট)।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, নোটিশ বোর্ড/খবর, একনজরে প্রতিষ্ঠান, কর্মকর্তা সংক্রান্ত তথ্য, কর্মচারী সংক্রান্ত তথ্য, সেবা সংক্রান্ত তথ্য, যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য, এপিএ সংক্রান্ত তথ্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিও) সংক্রান্ত তথ্য; এ বিষয়গুলোর আলোকে ৯৭টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পোর্টাল চেকিং/যাচাই করে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পোর্টালে শতভাগ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তবে উদ্ভিদ সংগ নিরোধ কেন্দ্র, স্থলবন্দর. জকিগঞ্জ, সিলেট-এর ওয়েব পোর্টালে উল্লিখিত বিষয়সমূহে কোনো ধরনের তথ্য পাওয়া যায়নি অর্থাৎ হালনাগাদের হার শূন্য। ৯৭টির মধ্যে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পোর্টালে ৫০% বা এর বেশি তথ্য পাওয়া গেলেও ২৩টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পোর্টালে হালনাগাদ তথ্যের হার ৫০% এর কম রয়েছে। একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের পোর্টালে আংশিক তথ্য দেয়া আছে, যেমন: কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম, পদবী আছে কিন্তু মোবাইল, ই- মেইল নেই।
সিলেট জেলার সরকারি অফিসসমূহের ওয়েব পোর্টালসমূহ শতভাগ হালনাগাদকরণের লক্ষ্যে সনাক-সিলেট এর পক্ষ হতে অনুষ্ঠানে ৭ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়-
১. ওয়েব পোর্টালগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদের সময়-সীমা নির্ধারণসহ অফিস আদেশ/চিঠি প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা;
২. তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী নির্ধারিত ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ এর নাম, পদবি, ফোন ও ই-মেইল ওয়েব পোর্টালের হোমপেজে নিয়মিত হালনাগাদ রাখার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করা;
৩. পরিবর্তনযোগ্য তথ্যগুলো নিয়মিত হালনাগাদ রাখতে মাসে একাধিকবার ওয়েব পোর্টাল ভিজিট করার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্দেশনা প্রদান করা;
৪. আংশিক তথ্যের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য বিস্তারিতভাবে হালনাগাদ রাখা (যেমন: প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীর নাম ও পদবীর সাথে তাঁদের মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল যুক্ত করা);
৫. যে সকল প্রতিষ্ঠানের জাতীয় তথ্য বাতায়নের পোর্টাল ছাড়া স্বতন্ত্র ওয়েব সাইট রয়েছে সে সকল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উক্ত স্বতন্ত্র ওয়েব সাইট-এর লিঙ্কটি জাতীয় তথ্য বাতায়নের সাথে যুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা;
৬. নিস্ক্রিয় ওয়েব পোর্টালগুলোকে সম্ভব হলে সক্রিয় করা অথবা পোর্টাল থেকে মুছে ফেলা। অন্যদিকে যেসকল প্রতিষ্ঠানের একাধিক লিঙ্ক সক্রিয় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লিঙ্কটি পোর্টাল থেকে মুছে ফেলা। এবং
৭. ওয়েব পোর্টালকে জনগণের জন্য কার্যকর করতে জনসম্প্রচার বৃদ্ধি করা।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সিলেট জেলার সরকারি অফিসসমূহের ওয়েব পোর্টাল পর্যবেক্ষণ কাজটিকে তিনি স্বাগত জানান এবং উক্ত ওয়েব পোর্টাল পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমটি বছরে একাধিকবার করার বিষয়ে সনাক-টিআইবিকে অনুরোধ করেন।অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারী, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সনাক সদস্য, ইয়েস সদস্য ও টিআইবি কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।