আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন আর তার জন্য একে বসবাসের উপযোগী করে দিয়েছেন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের কথা বলা হয়েছে, যা মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত।
সুরা আল-মুলকে আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই পৃথিবীকে আমাদের জন্য অনুগত করেছেন, যাতে আমরা এতে বিচরণ করতে পারি আর তার দেয়া রিজিক গ্রহণ করতে পারি। তবে একই সঙ্গে তিনি আমাদের সতর্ক করেছেন, আমাদের পরিণাম তাঁর কাছেই নির্ধারিত।
আল্লাহ বলেন, ہُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ ذَلُوۡلًا فَامۡشُوۡا فِیۡ مَنَاکِبِہَا وَکُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِہٖ ؕ وَاِلَیۡہِ النُّشُوۡرُ
তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে বশ্য করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তার কাঁধে চলাফেরা কর ও তার (দেয়া) রিজিক খাও। তারই কাছে তোমাদেরকে পুনর্জীবিত হয়ে যেতে হবে (সুরা মুলক: ১৫)
ভূমির সমস্ত জিনিস তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তবে এসব ব্যবহার ভুলে যেও না, এখানে তোমরা চিরকাল থাকতে পারবে না। একদিন এখান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে চলে যেতে হবে। তখন তার কাছে এসব নিআমতের হিসাব দিতে হবে। সুতরাং এখানকার প্রতিটি জিনিস আল্লাহ তাআলার হুকুম অনুযায়ী ব্যবহার কর।
এই আয়াতে আল্লাহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, পৃথিবীর সহজতা ও উপযোগিতা, আল্লাহ বলেছেন, তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে বশ্য করে দিয়েছেন, অর্থাৎ তিনি পৃথিবীকে আমাদের বসবাসের জন্য উপযোগী করেছেন। যদি তা অতিরিক্ত কঠিন বা অতিরিক্ত নরম হতো, তবে আমরা এর ওপর চলাচল ও বসবাস করতে পারতাম না।
রিজিক অন্বেষণের নির্দেশ: আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা এর কাঁধে চলাফেরা কর এবং তার দেওয়া রিজিক খাও, অর্থাৎ আমাদের কর্ম করে হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জন করতে হবে। অলসতা ও অন্যায়ের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন ইসলাম সমর্থন করে না। আখিরাতের স্মরণ: পৃথিবীতে আমরা স্থায়ী নই, বরং আমাদের ফিরে যেতে হবে আল্লাহর কাছে। আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, তার দিকেই পুনরুত্থান, অর্থাৎ এই জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য আমাদের একদিন আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি পাহাড়ের চূড়ায় বসেও থাকে, তবুও তার কাছে রিজিক পৌঁছে যাবে (ইবনে হিব্বান: ৩২৮৫) হাদিস আমাদের শেখায় যে, আল্লাহই আমাদের রিজিকের মালিক, তবে আমাদের চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, তোমরা এ দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো, যেন তোমরা একজন পথিক অথবা পথচলতি যাত্রী। (সহিহ বুখারি: ৬৪১৬)
এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার জীবনের শেষে আমাদের আখিরাতের জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই আয়াত ও হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, পৃথিবী আমাদের জন্য আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। তবে এটিকে শুধুমাত্র ভোগের স্থান হিসেবে দেখা যাবে না, বরং আমাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই নিয়ামতগুলো ব্যবহার করতে হবে। হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জন করা, পৃথিবীর সম্পদকে অপব্যবহার না করা, আখিরাতের কথা স্মরণ রেখে ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপন করাই প্রকৃত সফলতা। আমাদের উচিৎ এই আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।