যুক্তরাজ্যের ৬০ জন সংসদ সদস্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে পাঠানো হয়। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এ বিষয়ে শনিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
চিঠিটি এমন এক সময় দেওয়া হয়েছে, যখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ ঘোষণা দিয়েছেন—গাজার সকল বাসিন্দাকে রাফার ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় চিঠিতে দাবি করা হয়, গাজায় বর্তমানে একটি জাতিগত নিধন অভিযান চালানো হচ্ছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপিদের মধ্যে লেবার পার্টির বিভিন্ন মতাদর্শের (মধ্যপন্থি ও বামপন্থি) রাজনীতিবিদ রয়েছেন। এটি লেবার পার্টির সংসদ সদস্যদের দ্বিতীয়বারের মতো ফিলিস্তিন ইস্যুতে যৌথ অবস্থান। তবে এবারের প্রচেষ্টা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এতে স্বাক্ষরকারীরা তাদের নাম প্রকাশ্যে সংযুক্ত করেছেন। ‘লেবার ফ্রেন্ডস অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য মিডল ইস্ট’ সংগঠনের উদ্যোগে চিঠিটি তৈরি হয়। সংগঠনটির যুগ্ম সভাপতি সারা ওয়েন ও অ্যান্ড্রু প্যাকেসসহ মোট ৫৯ জন এমপি এতে স্বাক্ষর করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার ফলে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিষয়টিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন। এ ধরনের পদক্ষেপ প্রতিহত করতে ব্রিটেনকে অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য যেন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দ্রুত স্বীকৃতি দেয়, সে দাবিও জানানো হয়।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কাতজের পরিকল্পনাকে একজন শীর্ষ ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল স্ফার্ড ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের রূপরেখা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ব্রিটিশ এমপিদের মতে, গাজার পরিস্থিতি আসলে একটি ‘জাতিগত নির্মূলকরণ’ প্রক্রিয়া।
চিঠি দেওয়ার পূর্বেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
চিঠিতে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করা হয়, যার কিছু ব্রিটিশ সরকার ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করছে, যেমন—ইউএনআরডব্লিউএ-কে সহায়তা দেওয়া এবং হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা। তবে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতির বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো দাবিগুলো কার্যকর করতে সরকারের বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।
ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স এখনো নিজে থেকে সেই পদক্ষেপ না নিলেও তাদের মিত্রদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে।
ম্যাক্রোঁ বলেন, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চাইছে ইউরোপ। এটাই প্রমাণ করে, ইউরোপ মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয় এবং দ্বিচারিতার বিরোধী। তার মতে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়াটাই টেকসই শান্তির একমাত্র পথ।