Uk Bangla Live News | Stay updated with UK Bangla Live News

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট, ক্রেতারা ফিরছেন খালি হাতে

ডেস্ক সংবাদ

রাজধানীর মিরপুরের মুসলিম বাজারে পাঁচটি মুদি দোকান ঘুরে দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পেরেছেন সত্তরোর্ধ্ব সায়ীদ মালিক। তা-ও গায়ের দামের চেয়ে ৬ টাকা বেশি দিয়ে কিনেছেন ৩৪০ টাকায়। রূপনগর এলাকার এই বাসিন্দা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সয়াবিন তেলের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরতে হলো। বাজারে তেল নাই, এটা তো বাসায় বোঝে না। যেভাবেই হোক তেল নিতে হবে। তেল না থাকলে রান্না হবে না। পরিচিত দোকানেও তেল পেলাম না।’
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে যারা বাজারে গেছেন ভোজ্যতেল না পেয়ে তাদের অনেকেই হতাশ। অনেকে খালি হাতেই ফিরছেন বাসায়। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে মিলছে দু-একটি কোম্পানির সয়াবিন তেল। সেখানেও হাঁকানো হচ্ছে বাড়তি দাম। মিরপুরের মুসলিম বাজার, ১১ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। একই অবস্থা ঢাকার অন্য খুচরা বাজারগুলোতেও।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট সবচেয়ে বেশি। ফলে বিক্রেতারা পর্যাপ্ত তেল পাচ্ছেন না। কোনো কোনো বিক্রেতার অভিযোগ, রমজান মাস শুরুর আগে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আরও এক দফা দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করে নিতে চাইছে কোম্পানিগুলো।
মিরপুর ১২ নম্বরে মুসলিম বাজারের ৫-৬টি মুদি দোকান ঘুরেও মেলেনি সয়াবিন তেল। আলিমুদ্দিন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, কোম্পানি দাম বাড়াবে, এখন সরবরাহ বন্ধ। দু-তিনদিন ধরে কোনো সয়াবিন তেল বাজারে ঢুকছে না।
সরকার দফায় দফায় শুল্ক-কর কমালেও সয়াবিন তেলের আমদানি বাড়েনি। অন্য একজন বিক্রেতা জানান, অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নেই। অনেকেই আবার মজুত করছেন, যেন দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। এসব কারণে ভোজ্যতেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ক্রেতারা দোকানে এসে তেল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
কয়েকটি দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন পাওয়া গেছে। সেই দোকানগুলোতে নির্ধারিত দামে বা কিছুটা বাড়তি দামে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রূপচাঁদা এক লিটার সয়াবিন তেলের গায়ের দাম ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮১৮ টাকা। বেশিরভাগ দোকানে এ দামের চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।
বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি পাম ও সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর ১০-১১ টাকা কমানো হয়। কিন্তু এতেও আমদানি বাড়েনি। বরং বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট সবচেয়ে বেশি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা চাহিদার ১০ শতাংশ তেলও পাচ্ছেন না। উল্টো দাম বাড়েছে লিটারপ্রতি অন্তত ৫ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল নেই। কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল থাকলেও তা খুবই সীমিত। এক বা তিন লিটারের বোতল একেবারেই নেই। অনেকে দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। সেখানেও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত দাম। কিছু ক্ষেত্রে খোলা বা লুজ তেল বিক্রির অভিযোগ মিলেছে।
দোকানিরা বলছেন, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬০-১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিলাররা তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তেল কেনার জন্য আটা-ময়দার বস্তা কেনার শর্তজুড়ে দিচ্ছেন।
অন্যদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল সরবরাহ কমেছে বলে দাবি তেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারের হিসাবে লিটারে ১০-১৩ টাকা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের মতো।
তবে আমদানিকারকদের এমন দাবির সঙ্গে একমত নন ভোক্তারা। সানমুন নামের একজন ক্রেতা বলেন, তেল আমদানি হয়েছে তিন-চার মাসে আগে। অথচ এখন বলা হচ্ছে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। এটি আসলে অযৌক্তিক কথা।
তিনি বলেন, কর ও শুল্ক কমানোর পরও তেলের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। এখন আবার নতুন করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। সরকারের শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম গণমাধ্যমে জানান, সরকার শুল্ক-কর যা কমিয়েছে, তার চেয়ে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে বেশি। কোম্পানিগুলো লোকসানের ঝুঁকিতে থাকলেও সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে সরবরাহ বাড়িয়েছে।
জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়েছে। স্থানীয় বাজারে দাম বাড়াতে আমরা ১০ দিন আগে ট্যারিফ কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত এলে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো।
কোনো পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কমানো মানে ওই পণ্যের আমদানি বাড়বে এবং দাম কমবে। গত অক্টোবরে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে দুই দফায় শুল্ক-কর কমায় সরকার। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ক-কর কমিয়ে তা নামিয়ে আনা হয় ৫ শতাংশে। কিন্তু দেশের বাজারে পণ্যটির দাম কমার বিপরীতে উল্টো বাড়তে দেখা যায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। সে হিসাবে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এবার আমদানিকারকের সংখ্যাও কমেছে।

Print
Email

সর্বশেষ সংবাদ

5645545445541211221.jpg645b3b58a9a0d
কিন ব্রিজে মোটরসাইকেল চলবে
কিন ব্রিজে মোটরসাইকেল চলবে
394781
বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাজ্যের ‘প্রায়োরিটি ভিসা’ সেবা চালু
বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাজ্যের ‘প্রায়োরিটি ভিসা’ সেবা চালু
aca64a34f62141d3a15012f08955c55f9afb2131638cab82
এক ক্লিকেই পুলিশের সকল সহায়তা মিলবে ‘জিনিআ’ অ্যাপে
এক ক্লিকেই পুলিশের সকল সহায়তা মিলবে ‘জিনিআ’ অ্যাপে
Untitled-1-copy-8
শনিবার সিলেটে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে
শনিবার সিলেটে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে
28-20241112000300
ব্যাংকে টাকা নেই, টাকার তোলার ভোগান্তিতে গ্রাহকরা
ব্যাংকে টাকা নেই, টাকার তোলার ভোগান্তিতে গ্রাহকরা
image_222097_1757616440
সর্ব মিত্র চাকমার ফেসবুক আইডি হ্যাক
সর্ব মিত্র চাকমার ফেসবুক আইডি হ্যাক

সম্পর্কিত খবর