ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে বিশ্বের প্রথম সরাসরি ‘ড্রোন যুদ্ধ’-এর নজির গড়েছে ভারত ও পাকিস্তান। সাম্প্রতিক সংঘাতে দুই দেশের মধ্যে একাধিক হামলা ও পাল্টা হামলায় ব্যাপকভাবে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ভারত-শাসিত কাশ্মীর ও ভারতের ভূখণ্ডের অন্তত তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা গত কয়েক ঘণ্টায় অন্তত ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এসব ড্রোন ছিল ইসরায়েলের তৈরি ‘হ্যারোপ’ মডেলের। পাকিস্তানের করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে এসব ড্রোন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
ভারত বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও সামরিক সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা পাকিস্তানের বেশ কিছু আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করেছে। যদিও পাকিস্তান এ দাবি নাকচ করেছে।
সাম্প্রতিক এই সংঘাতে দুই দেশের মধ্যে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতীয় হামলায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ৩৬ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে জম্মু ও কাশ্মীরে অন্তত ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই হামলা ছিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার জবাব। তবে পাকিস্তান এ হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. জাহারা ম্যাটিসেক বলেন, “ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এই সংঘাত বিশ্বকে এক নতুন ড্রোন-যুদ্ধ যুগের সামনে নিয়ে এসেছে। এখানে ‘অদৃশ্য চোখ’ এবং নির্ভুলতা নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল থেকে শিখেই শত্রুপক্ষের রাডার সক্রিয় করে সেটি ধ্বংস করতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিকভাবে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ কৌশলের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে দুই দেশের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
তথ্যসূত্র: বিবিসি