মুন্নী সাহা ও স্বামীর অর্থ লেনদেন: ১৩৪ কোটি টাকার অনুসন্ধানে দুদক
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টেলিভিশন উপস্থাপক ও সাংবাদিক মুন্নী সাহা এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে, এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ রয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পরপরই মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে থাকা ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। বর্তমানে তার স্থগিতকৃত হিসাবে মাত্র ১৪ কোটি টাকা রয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে দেশের ১৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে। বিধিবহির্ভূত এই লেনদেনের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ইতোমধ্যে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেনের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়, যেখানে নমিনি হিসেবে ছিলেন মুন্নী সাহা। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের একটি শাখায় মাহফুজুল হকের নামে প্রাইম ট্রেডার্সের নামে আরেকটি হিসাব খোলা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও এই হিসাবগুলোর মধ্যে কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ২০১৯ সালের একটি উদাহরণে দেখা গেছে, এক দিনে এমএস প্রমোশনের হিসাব থেকে প্রাইম ট্রেডার্সের হিসাবে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এই লেনদেনকে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করে বিএফআইইউ।
এছাড়া, বিএফআইইউ মুন্নী সাহার নামে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান পেয়েছে, যা গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের শান্তিনিকেতনে অবস্থিত।
মুন্নী সাহা সাংবাদিকতায় ভোরের কাগজ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। পরে তিনি একুশে টেলিভিশন এবং এটিএন বাংলায় কাজ করেছেন। তার ক্যারিয়ারে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সংবাদ উপস্থাপন আলোচিত হয়েছিল। তবে, সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তার বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেন ও পাচারের অভিযোগ উঠে আসায় বিষয়টি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এই তদন্তের পরিণতি মুন্নী সাহা ও তার স্বামীর জন্য কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। দুদকের তদন্তের পাশাপাশি বিএফআইইউ এই লেনদেনগুলো অর্থ পাচার কি না, তা নির্ধারণে কাজ করে যাচ্ছে।