আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে কোরবানির বিষয়ে নানা প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে অনেকেই দ্বিধায় রয়েছেন—তাদের ওপর কোরবানি আদায় ওয়াজিব কি না। ইসলামী শরিয়তের আলোকে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত পূরণ হলে কোরবানি একজন মুসলিমের ওপর ফরজ না হলেও ওয়াজিব হয়ে যায়।
ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানি এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি ইবরাহিমী আত্মত্যাগের চেতনা জাগ্রত হয়। এটি কেবল পশু জবাই নয়, বরং আল্লাহর জন্য সম্পদ উৎসর্গ করার এক মহান অনুশীলন।
ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, যে ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী এবং ঈদুল আজহার সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন, তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এখানে নেসাব বলতে বোঝায়, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা, কিংবা এর সমমূল্যের টাকা বা সম্পদের মালিক হওয়া।
শুধু স্বর্ণ-রূপাই নয়, কোরবানির নেসাব নির্ধারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, অলঙ্কার, ব্যবসায়িক পণ্য বা অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রও হিসাবযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন ফিকহবিদরা।
ধর্মীয় সূত্রে জানা যায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় অবস্থানকালে টানা দশ বছর কোরবানি করেছেন। এক হাদিসে তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।” (ইবনে মাজাহ)
কোরআনেও কোরবানির গুরুত্ব স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সূরা আনআমে ইরশাদ হয়েছে, “বল, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু—all for Allah, the Lord of the worlds।” (আয়াত: ১৬২)
একান্নবর্তী পরিবারের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। পরিবারের একাধিক সদস্য যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তাহলে প্রত্যেকের ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব হবে। একটি পশু দিয়ে পরিবারের সব সদস্যের কোরবানি আদায় হবে না। সে ক্ষেত্রে পৃথক পশু অথবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ নিতে হবে।
ধর্মীয় গবেষকরা মনে করেন, কোরবানির মাধ্যমে একজন মুসলিম আত্মনিবেদন ও ত্যাগের যে শিক্ষা গ্রহণ করেন, তা তার জীবনের অন্যান্য দিকেও প্রভাব ফেলে। আর সেই শিক্ষার আলোয় সমাজ ও পরিবারেও জাগে কল্যাণ ও সহমর্মিতা।