বার্মিংহামের রাস্তায় জমে থাকা আবর্জনা এখন শুধু দুর্গন্ধ আর অস্বস্তির কারণ নয়, বরং শহরের ভেতরে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য প্রকাশের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরের বিন সংগ্রহকারী কর্মীদের ধর্মঘট এখন ষষ্ঠ সপ্তাহে পা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বার্মিংহামের অভ্যন্তরীণ ঘনবসতিপূর্ণ দরিদ্র এলাকাগুলো।
স্মল হিথ, স্পার্কহিল, স্পার্কব্রুক এবং লেডিউডের মতো এলাকাগুলোয় রাস্তার ধারে, ফুটপাথে এবং অলিগলিতে জমে উঠেছে ময়লার স্তূপ। একদিকে যখন ধনী এলাকাগুলোর রাস্তাগুলো তুলনামূলক পরিষ্কার, অন্যদিকে দরিদ্র এলাকায় হাঁটা পর্যন্ত দায় হয়ে উঠেছে। বালসাল হিথে এতটাই আবর্জনা জমেছে যে রাস্তায় চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, হারবোর্নের মতো অভিজাত এলাকায় বিনগুলো সময়মতো খালি হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে। জানুয়ারিতে ইউনাইট ইউনিয়নের সদস্যরা একদিনের কর্মবিরতির মধ্য দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে ১১ মার্চ থেকে ৩০০ জনের বেশি কর্মী পূর্ণ ধর্মঘটে যান। আন্দোলনের মূল কারণ— কিছু কর্মীর পদাবনতি ও বেতন কর্তনের ঘোষণা।
ইউনিয়ন বলছে, যদি কাউন্সিল এককালীন অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং নিশ্চিত করে যে আর কোনো বেতন কাটা হবে না, তাহলে কর্মীরা কাজে ফিরবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিটি কাউন্সিল ও ইউনিয়নের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। ফলে আলোচনা স্থগিত রয়েছে এবং ধর্মঘটও চলমান।
এই ধর্মঘটের প্রভাব শহরের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের ওপর পড়ছে বেশি। বহু পরিবারের গাড়ি নেই, ফলে নিজেরা আবর্জনা ফেলার সুযোগও নেই। জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বর্জ্যও বেশি জমছে। এর মধ্যে, ইঁদুরের উপদ্রব নিয়ে এলাকাবাসীর উদ্বেগ বাড়ছে। হ্যান্ডসওয়ার্থে এক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণকর্মী জানান, কাজের চাপ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
স্মল হিথের গ্রিন লেন মসজিদের সিনিয়র আউটরিচ ম্যানেজার সেমির সাইদ বলেন, “রাস্তায় শুধু আবর্জনার স্তূপ নয়, এটা এখন একেবারে আবর্জনার পাহাড়। এটা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, এটা মর্যাদার প্রশ্নও। ইঁদুররা এখানে ‘ভোজ’ দিচ্ছে, এটা অকল্পনীয়।”
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মসজিদ নিজেদের উদ্যোগে সিটি কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য অস্থায়ী পয়েন্ট চালু করেছে। সেখানকার লোকজন গাড়ি করে এসে নিজেদের আবর্জনা জমা দিচ্ছেন। কিন্তু এভাবে চলা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৭ সালের ধর্মঘটের চেয়েও এবারের সংকট আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। শহরের ভেতরের দরিদ্র এলাকাগুলোতেই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে, যা বার্মিংহামের সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্যকেও নতুনভাবে তুলে ধরছে।